Friday 12 November 2021

পূর্ব পশ্চিম

পূর্বে যদি কোন মানুষের “সিজোফ্রেনিয়া” র লক্ষণ দেখা দেয় তাকে বলবে “জ্বীনের আছড় হইছে” । ওঝা’র কাছে নেবে, হুজুর আনবে, ঝাড়াবে, পেটাবে, বেঁধে রাখবে কিন্তু কখনো “মন বৈকল্য” হয়েছে ভেবে ডাক্তার দেখাবে না। পশ্চিমে “সিজোফ্রেনিয়া” র লক্ষণ দেখা দিলে তাকে ডাক্তার দেখাবে, দরকারে কড়া ডোজের ওষুধ দিয়ে হাসপাতালের কেয়ারে রাখবে। বিনা অনুমতিতে কোন “জ্বীন” এখানে কাউকে ধরে না, মজার কথা হলো আরব দেশগুলোতেও “জ্বীন আছড়” করে না। কারো যদি “এপিলেপসি” থাকে তাহলে তাকে পাড়াময় নাম দেবে “মৃগী রোগী” বলে। খিঁচুনি হলে নাকে “জুতো” ধরে রাখবে। অথচ এটি স্নায়ুতন্ত্রের জটিলতাজনিত একটি রোগ। দূর্ভাগ্যজনক ভাবে এই রোগটি বিশেষভাবে চোখে পড়ে, নিম্ন আয়ের দেশে। তবে পশ্চিমে বিরল হলেও এটি আছে। এখানে অ্যান্টি-এপিলেপটিক ওষুধ ব্যবহার করে রোগ নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা করে, প্রয়োজনে অপারেশান করে। অনেক সময় রোগীকে ড্রাইভিং, সুইমিং ইত্যাদিতে বারন করে দেয়া হয়। যতদিন সম্পূর্ন সুস্থ না হয় ড্রাইভিং লাইসেন্স ইস্যু করে না। “ইন্টারসেক্স” জটিলতা নিয়ে বাচ্চারা জন্ম নিলে তাদের তাৎক্ষণিক চিকিৎসা করে ঠিক করা হয় না। বাবা-মায়ের নিয়তি বলে তুলে দেয় হাতে, নাম হয় “তৃতীয় লিংগ” । বাবা-মায়েরা তাদের রাস্তায় ফেলে দিয়ে নিজেদের নাক-কান রক্ষা করে, শুরু হয় মানব সন্তানদের মানবেতর জীবন যাপন। অথচ পশ্চিমে সাথে সাথে ‘normalising’ সার্জারি করে সেটি ঠিক করে বাবা মায়ের হাতে দেয়া হয়। তারপরও দরকারে হরমোন চিকিৎসা ইত্যাদি দেয়া হয়। পূর্বে বাচ্চারা মিথ্যে কথা বললে, খেলতে গিয়ে অন্যের জিনিস নিয়ে এলে যাকে বলে চুরি করলে, এরোগেন্ট আচরন করলে, বাচ্চাকে বখা কিংবা খারাপ বাচ্চা কনক্লুশেন টেনে মাইর দিয়ে সোজা করে ফেলা হয়। পরিবারময়, পাড়াময় মানসিক নির্যাতন করে জনমের মত অপরাধী বানিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়। পশ্চিমে এগুলোকে অস্বাভাবিক আচরণ বলে ডায়গোনসিস করা হয় এবং ছোট থেকে ছোট বয়সেই ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। এই সিমটমগুলোকে এডিডি, এডিএইচডি ইত্যাদি ভাগে বিভক্ত করে এর চিকিৎসা/কাউন্সেলিং করা হয়। পশ্চিমের ডাক্তারের মতে, শিশু নিরাপদ বোধ করছে না তাই মিথ্যে বলছে। বাচ্চার মিথ্যে বলার জন্য বাচ্চা নয় দায়ী বাচ্চার বাবা-মা কিংবা পরিবেশ। পিতামাতার কাজের প্রতিক্রিয়া হলো বাচ্চার আচরণ। সম্প্রতি বহুল আলোচিত সিনেমা “রেহানা মরিয়ম নূর” নিয়ে অনেক রিভিউ পড়লাম। আমি মনে করতে পারছি না, কোন রিভিউতে “চাইল্ড এবিউজ” ব্যাপারটি উঠে এসেছিলো কিনা। সবাই প্রতিবাদী রেহানা নিয়ে কথা বলছে, কিন্তু এটা দ্যা সেইম টাইম, সে নিজের বাচ্চার প্রতি এবিউজিভ আচরণ করছে যেটা নিয়ে কেউ কথা বলছে না। বিশেষ করে, সিনেমার শেষ দৃশ্যটি একদম অগ্রহণযোগ্য। আমার দৃষ্টিতে তার কারণ, সম্ভবত, এ ধরনের আচরণকে আমাদের দেশে খুব সাধারণ হিসেবে ধরা হয়, দেখা হয়, এবিউজ ভাবাই হয় না। তাই সাদ এটি সানন্দে তার ওয়ার্ল্ড ক্লাশ সিনেমায় ঢুকিয়েছেন আর দর্শকরা সেটি স্বাভাবিক ধরে নিয়ে দেখছেন। পশ্চিমারা বাহাবা দিচ্ছে। তাই বলছিলাম কি, মনোবিজ্ঞান একটি পরিপূর্ণ বিজ্ঞান আর মানসিক স্বাস্থ্য শারীরিক স্বাস্থ্যর মতই সমান গুরুত্বপূর্ণ। এটিকে স্বীকার করুন, সহমর্মিতা গড়ে তুলুন। ডাক্তারের পরামর্শ নিন। সুস্থতা নিজের জন্যে দরকার, সমাজের জন্যেও দরকার। আজকের বাংলাদেশের পরিস্থিতিতে আরও অনেক বেশী দরকার।
তানবীরা হোসেন ১২/১১/২০২১

No comments:

Post a Comment