Tuesday 30 November 2021

বিশ্ব বদলে দেওয়া যত ডাচ আবিষ্কার

https://bangla.bdnews24.com/kidz/article1977178.bdnews বিশ্ব বদলে দেয়া ডাচ আবিস্কারসমূহ বিশ্ব মানচিত্রে বলতে গেলে যার অবস্থান খুঁজে পাওয়া দুস্কর, মাত্র বেয়াল্লিশ হাজার ছয়শো উনাশি বর্গ কিলোমিটারের দেশ নেদারল্যান্ডস এবং জনসংখ্যা মাত্র এক কোটি সত্তর লক্ষ। কিন্তু তাদের আবিস্কারের ইতিহাস বিশাল। "God created the earth, but the Dutch created the Netherlands", সমুদ্র থেকে বাঁধ দিয়ে দেশকে রক্ষা করা, সমুদ্রের লোনা পানি বাঁধের ভেতরে এসে মিঠে পানিতে রুপান্তরিত হয়ে যাওয়ার গল্পতো এখন পুরনো। বাঁধের প্রযুক্তি ব্যবহার করে বাংলাদেশ সহ বহু দেশ অনেক উপকৃত হয়েছে এবং এখনো এই নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। কিন্তু তাদের কিছু কিছু আবিস্কার বিশ্ববাসীর জীবনকে কতভাবে বদলে দিয়েছে আজকে আমি সে গল্পটি লিখবো। ওয়াইফাইঃ ইন্টারনেট ছাড়া আধুনিক পৃথিবী অচল। একুশ শতাব্দীর মাইলফলক আবিস্কার। ইন্টারনেটকে ঘরে ঘরে সহজলভ্য, ব্যবহারপোযোগী ও সায়শ্রী মূল্য এনে দিয়েছে ওয়াইফাই (WIFI). চব্বিশ ঘন্টা অনলাইন, টিভি, ফোন, মোবাইল, ট্যাব একটা বাড়িতে কত ডিভাইস আর সবই চলছে ওয়াইফাইতে। উনিশো নব্বই সালে নেটওয়ার্ক বিজ্ঞানী ভিক্টর হেইস আর কেইস লিঙ্কস প্রথমে ওয়েভল্যানের ভিত্তি স্থাপন করেছিলেন যা পরে নিউখেইনে এসে ওয়াইফাইয়ে রুপান্তর হয়। বিজ্ঞানী ভিক্টর হেইসকে “ফাদার অফ ওয়াই-ফাই” উপাধি দেয়া হয় আর কেইস লিঙ্ককে বলা হয় “ইন্টারনেটের অগ্রদূত”। হাই ফিডেলিটি আর ওয়ারল্যাস শব্দ দুটো থেকে “ওয়াইফাই” নামটির উৎপত্তি। আজকে আমরা ওয়াইফাইয়ের যে রুপটি দেখছি সেটি এসেছে অস্ট্রেলিয়ান কোম্পানি সিএসআইআরও এর দ্বারা উনিশো সাতানব্বই সালে। এটি ইলেকট্রো ম্যগনেটিভ ওয়েভ বা রেডিও ওয়েভ ব্যবহার করে। এর নাম কিন্তু প্রথমে Wifi ছিলো না, এটি “কে 802.11” নামে পরিচিত ছিলো। একটি সুন্দর নামের জন্যে ব্র্যান্ড তৈরী করা সংস্থা ইন্টারব্র্যান্ডকে নিয়োগ দেয়া হয়েছিলো যারা এই ওয়াইফাই নামটি নিয়ে এসেছিলো। উনিশো নিরানব্বই সালের আগষ্টে প্রথম ওয়াইফাই নামটি বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহৃত হয়েছিল। সম্ভবত আমার এই লেখাটা আপনি এখন ওয়াইফাইয়ের সাহায্যেই পড়ছেন। ব্লু টুথঃ ওয়াইফাইয়ের পরে অন্তর্জালে মোটামুটি সবচেয়ে পরিচিত শব্দ ব্লু টুথ। ডাচ ইঞ্জিনিয়ার ডঃ ইয়াপ হার্টসেন উনিশো নব্বই সালে ডিভাইসের মধ্যে ওয়্যারলেস সংযোগের ধারণাটি প্রবর্তন করেন। তখন তিনি সুইডিশ টেলিকমুউনিকেশান কোম্পানী এরিকসনে কাজ করতেন। উনিশো নব্বই সালে ডঃ ইয়াপ হার্টসেন ইউরোপীয় পেটেন্ট অফিস কর্তৃক ইউরোপীয় আবিষ্কারক পুরস্কারের জন্য মনোনীত হন। "ব্লুটুথ" নামটি ড্যানিশ রাজা হ্যারাল্ড ব্লোট্যান্ডের উপনামের একটি ইংরেজী ভাষান্তর। দশম শতাব্দীতে, ডেনমার্কের দ্বিতীয় রাজা ডেনমার্ক এবং নরওয়ের জনগণকে একত্রিত করার জন্য স্ক্যান্ডিনেভিয়ান প্রবাদে বিখ্যাত ছিলেন। ব্লুটুথ স্ট্যান্ডার্ড তৈরিতে, এরিকসন মোবাইল টেকনোলজি টিম বিশ্বাস করেছিলো যে তারা আসলে পিসি এবং মোবাইল শিল্পকে একত্রিত করার ক্ষেত্রে অনুরূপ কিছু করছে। তাই এই নামটিই প্রাধান্য পেলো। লোগোটি একটি ভাইকিং শিলালিপি, যা বাইন্ড রুন নামে পরিচিত, যেটি রাজার দুটি আদ্যক্ষর একসাথে যোগ করেছে। ডঃ ইয়াপ হার্টসেনের নামে দুই শতাধিক পেটেন্ট রয়েছে, এমেরিকার “ন্যাশনাল ইনভেন্টরস হল অফ ফেমে” টমাস এডিসন, হেনরি ফোর্ড, রাইট ভাই এবং স্টিভ জবস সহ অন্যান্যদের সাথে তার নামও অন্তর্ভুক্ত। ব্যাক্তি জীবনে এতটাই সাধাসাধি ইয়াপ যে ড্রেন্টের মিডিয়ামার্কেটের ব্লু টুথ ডিপার্টমেন্টে দাঁড়িয়েও কেউ জানে না পাশেই এর জনক থাকেন। ডঃ ইয়াপ হার্টসেন ডাচ পত্রিকা আলখেমেইনে ডাগব্লাদকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে বলেন, ব্লু টুথ আবিস্কার নিঃসন্দেহে আমার জীবনের মাইলফলক কিন্তু আমি নিজেকে টমাস আলভা এডিসনের সমকক্ষ মনে করি না। আর এই সাদাসাদি সাইকেলে চড়া জীবন আবার খুব প্রিয়, খ্যাত হয়ে বিড়ম্বনায় পরতে চাই না। স্লট ডিজিটাল কোডিং সিস্টেমঃ খ্রোনিংখেনে জন্ম নেয়া ডাচ ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ার রোমকে ইয়ান বের্নহার্ড স্লট উনিশো পচানব্বই সালে একটি ডেটা শেয়ারিং টেকনিক আবিস্কার করেছেন যা দিয়ে একটি সম্পূর্ণ ডিজিটাল মুভি ফাইলকে পাঁচশো বারো কিলোবাইটে রুপান্তর করে সংরক্ষণ করা যেতে পারে। ইয়ান স্লট যখন তার আবিস্কারকে জনসম্মুখে নিয়ে আসার জন্য বিনিয়োগকারী খুঁজে পেয়ে কন্ট্রাক্ট সাইন করবেন বলে সব ঠিক হয়েছে ঠিক তার একদিন আগে এগারোই জুলাই হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে তিনি মারা যান। সম্পূর্ণ সোর্স কোডটি পুনরুদ্ধার করা হয়নি, প্রযুক্তি ও দাবীটিও আর পুনরুৎপাদন কিংবা যাচাই/পরীক্ষা করা হয়নি। এসডিসিএস ডিজিটাল স্টোরেজের জন্য একটি নতুন বর্ণমালা যা বাইনারি কোড ব্যবহার করে নি, কিন্তু অনেক বেশি কার্যকর পদ্ধতি। এসডিসিএস এর প্রযুক্তি খুব সহজ। একটি টেক্সট সীমিত সংখ্যক অক্ষর নিয়ে গঠিত, তেমনি একটি সিনেমাতে সীমিত পরিমাণে রং এবং শব্দ থাকে। সেই সমস্ত মৌলিক তথ্য পাঁচটি অ্যালগরিদমে পাঁচটি মেমরি স্টোরে সংরক্ষণ করা হয়েছিল। চলচ্চিত্রের জন্য, প্রতিটি অ্যালগরিদমের সর্বোচ্চ দৈর্ঘ্য চুয়াত্তর এমবি। এটি মোট তিনশো সত্তর এমবি। প্রযুক্তিটি শুরু করার জন্য, শুধুমাত্র একটি সঠিক ভিত্তির প্রয়োজন ছিল। একটি বইয়ের প্রতিটি পৃষ্ঠার জন্য, একটি চলচ্চিত্রের প্রতিটি ছবির জন্য, স্লট একটি একক কোড গণনা করে। এই কোডগুলির সংযোজন আবার একটি একক কোডে পরিণত হবে। সিনেমার দৈর্ঘ্য বা বইয়ের আকার নির্বিশেষে চূড়ান্ত কোডটির ভিত্তি দৈর্ঘ্যে এক কিলোবাইট হবে। কম্পিউটার সায়েন্সের অধ্যাপক রুল পাইপার এ ধরনের উচ্চ পর্যায়ের সংকোচনের সম্ভাবনা নিয়ে মানুষের সংশয়ের প্রশ্নের জবাবে বলেন, “প্রত্যেকেই এটি সম্পর্কে ভুল ধারনা করে। এটি সংকোচনের বিষয় নয়। প্রযুক্তিটিকে অ্যাডোব-পোস্টস্ক্রিপ্টের ধারণার সাথে তুলনা করা যেতে পারে, যেখানে প্রেরক এবং প্রাপক জানেন যে কোন ধরণের ডেটা রেসিপি স্থানান্তর করা যেতে পারে, প্রকৃতপক্ষে ডেটা নিজেই প্রেরণ না করে।" ক্যাসেট-সিডি-লেজার ডিস্ক-ডিভিডিঃ শুধু মিউজিক সিস্টেম বানিয়ে ফিলিপ্স হাত গুটিয়ে বসে থাকেনি, মিউজিক সিস্টেম ব্যবহার করার জন্যে যা যা আনুষাঙ্গিক জিনিস প্রয়োজন তাও বানিয়েছে ফিলিপ্স। লু ওটেন্স আর তার টিমের দ্বারা উনিশো তেষট্টি সালে বেলজিয়ামের হ্যাসেল্টে শুরু হয়েছিলো ক্যাসেটের উৎপাদন। এমেরিকান পদার্থবিদ জেমস রাসেল উনিশো পয়ষট্টি সালে মার্কিন শক্তি বিভাগের ব্যাটেল মেমোরিয়াল ইনস্টিটিউট দ্বারা পরিচালিত প্যাসিফিক নর্থওয়েস্ট ন্যাশনাল ল্যাবরেটরিতে কাজ করার সময় এটি নিয়ে চিন্তা করেছিলেন। অপটিক্যাল ডিজিটাল রেকর্ডিং (ওডিআর) নামে পরিচিত তার ধারণা ছিল রেকর্ডিং এবং প্লেব্যাক করার জন্য লেজার ব্যবহার করে আলোক সংবেদনশীল ফিল্মে তথ্য সংরক্ষণ করা। উনিশো চুয়াত্তর সালে, ওডিআর তার কাজের জন্য, রাসেলকে আএর এন্ড ডি হানড্রেড পুরস্কারে সম্মানিত করে। উনিশো আশি সালের মধ্যে তিনি প্রথম ডিস্ক প্লেয়ার তৈরি করেছিলেন। উনিশো বিরাশি সালের অক্টোবরে ফিলিপ্স প্রথম অডিও সিডি রিলিজ করে। এই যুগান্তকারী উদ্ভাবনের জন্যে দুই হাজার নয় সালে ফিলিপস IEEE মাইলফলক পুরস্কার পেয়েছিল। দুই হাজার পনের সালের জানুয়ারিতে, সিডি ফিলিপ্সের সবচেয়ে মূল্যবান আবিস্কার হিসাবে পুরস্কৃত হয়েছিল, যা আইন্ডভেনস ডাগব্ল্যাডের পাঠক এবং ওমরুপ ব্রাবান্টের শ্রোতাদের পাশাপাশি ফিলিপস রিসার্চ কর্মীদের ভোট দ্বারা নির্বাচিত হয়েছিলো। জনগণ এবং রিসার্চ ফেলো উভয়ই বিজয়ী হিসাবে সিডিকে ভোট দেওয়ার ক্ষেত্রে সর্বসম্মত ছিলেন। প্রতিফলনের নীতি অনুসরণ করে ফিলিপ্স একটি ভিডিওডিস্ক তৈরি করেছিলো, উনিশো বাহাত্তর সালে এমসিএ’র সাথে মিলিত হয়ে তাদের প্রযুক্তিটিকে একত্রিত করে তারা এটি বাজারে আনে। ভিসিআর চালু হওয়ার দুই বছর পর, উনিশো আটাত্তর সালে এগারোই ডিসেম্বর জর্জিয়ার আটলান্টা বাজারে লেজারডিস্ক প্রথম পাওয়া যায়। সিডি’র উন্নত বিবর্তিত প্রক্রিয়া হলো ডিভিডি। এটা আসলে কোনো একক ব্যক্তির অবদান নয়, বরং অনেক মানুষ এবং অনেক কোম্পানির অবদান। এটির দুটি গঠন প্রক্রিয়া ছিলো। এমএমসিডি ফর্ম্যাটটি ফিলিপ্স ও সনি দ্বারা প্রবর্তিত হয়েছিল। এত গবেষণা-আলোচনা যে নাটল্যাবে হয়েছে সেখানে গেছি কতবার, কত ট্রেনিং এ। ছোটবেলায় ক্যাসেট তারপর সিডি। আমাদের ঘরে ঘরে যেসব ব্যবহার করেছি তার জন্ম হয়েছিলো এই স্থানে। কত মানুষের জীবন গড়ে দিয়েছে, আনন্দ-বেদনার কাব্য রচিত হয়েছে এই ঘরগুলোতে হাঁটতে হাঁটতে যখন ভাবতাম গা কেমন শিরশির করে উঠতো। দ্যা আই টেস্টঃ যারা যারা চোখের ডাক্তারের কাছে গিয়েছি চোখ পরীক্ষার জন্যে, ছোট অক্ষর – বড় অক্ষর সব পড়তে হয়েছে। আর এভাবে চোখ পরীক্ষার এই পদ্ধতিটি আবিস্কার করেছেন ডাচ চক্ষু বিশেষজ্ঞ হ্যারমান স্ন্যালেন। আঠারশো বাষট্টি সালে “ভিজ্যুয়াল একুইটি” নির্ধারন করার জন্যে যে চার্টটি তিনি প্রণয়ন করেন তাকে “স্ন্যালেন চার্ট”ও বলা হয়, যা খুব দ্রুত সারা বিশ্বে ছড়িয়ে যায় এবং চোখ পরীক্ষার সাবর্জনীন মানদন্ডে পরিনত হয়। এই আবিস্কারের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দিকটি যাকে স্ন্যালেন “অপটোটাইপস” বলেছিলেন, বিশেষভাবে ডিজাইন করা পাঁচ বাই পাঁচের অক্ষরগুলো। স্ট্যান্ডার্ড ফন্ট ব্যবহার না করে এগুলো ব্যবহার করলে অনেকটা নির্ভুলভাবে পরিমাপ করা যায়। সাধারণ দৃষ্টিশক্তিকে অপটোটাইপ অক্ষরের একটি লাইন সঠিকভাবে পড়তে ব্যবহার করা হয়েছিলো যাতে পাঁচ মিনিটের চাপ যুক্ত করা হয়েছিলো এবং এক মিনিটের চাপ আলাদা করা হয়েছিলো (D); V= d/D.। স্ন্যালেন চার্ট আবিস্কারের পর অন্য যেকোনো পোস্টারের থেকে সবচেয়ে বেশি কপি খোদ যুক্তরাষ্ট্রে বিক্রি হয়েছে। একুশ শতাব্দীতেও বিশ্বব্যাপী চিকিৎসাক্ষেত্রে মানদন্ড হিসাবে রয়ে গেছে। অনেক অনেক ভারী ভারী তত্ত্ব নিয়ে এতক্ষণ আলোচনা হলো, এবার অন্যকিছুঃ গাজরঃ গাজরের রঙ কেন কমলা? এর সাথে কি নেদারল্যান্ডসের রাজ পরিবার যাদের “হাউজ অফ অরানিয়া” কিংবা “কমলা বাড়ি” বলা হয় তাদের কোন যোগাযোগ আছে? চিরকালই কি গাজর কমলা রঙের ছিলো? জবাব হলো, না, গাজর আসলে কমলা রঙের ছিলো না। এমেরিকার মত জায়ান্ট দেশের পরই কৃষিকাজে পৃথিবীতে দ্বিতীয় স্থানে আছে নেদারল্যান্ডসের মত আয়তনে পুঁচকে একটি দেশ। কথিত আছে, সতেরশো সালের দিকে যখন ডাচল্যান্ড স্প্যানিশ কলোনী ছিলো তখন কমলা রাজপুত্র উইলিয়াম ফ্রেডেরিক, যে কিনা নেদারল্যান্ডসকে উদ্ধার করে, সংগঠিত করার জন্যে ডাচ বিদ্রোহের নায়কও ছিলো, তার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ডাচ কৃষকেরা সাদা, বেগুনী গাজরের পরিবর্তে কমলা গাজরের পরীক্ষামূলক চাষাবাদ শুরু করে। কমলা গাজর স্বাদ ও পুষ্টিগুনে পৃথিবীব্যাপী দারুণ সমাদৃত হয় এবং ডাচ রাজ পরিবারের পৃষ্ঠপোষকতায় এর ব্যাপক চাষাবাদ শুরু হয়। যদিও জনপ্রিয় এই গল্পটি জেনেটিসিস্টদের দ্বারা মূলত বাতিল হয়ে গেছে। গবেষকরা প্রথমবারের মতো গাজরের জিনোম সম্পূর্ণরূপে ম্যাপ করে দেখেন যে, মিউটেশনের ফলে রোমান সাম্রাজ্যের দিনগুলিতে কমলা গাজর প্রথম দেখা দেয়। গবেষণায় দেখা গেছে যে গাজর প্রকৃতপক্ষে তাদের কমলা রঙের জন্য ডাচ কৃষকদের দ্বারা চাষাবাদ করা হয়েছিল, কিন্তু পরিবেশবিদ ক্লাস ভ্রিডলিং ভক্সক্রান্টকে বলেছিলেন যে 'কমলা গাজর আগেও ছিল তার ভাল প্রমাণ রয়েছে।' যারা জানেন না তারা জেনে নিন, গাজর অনেক অনেক রঙে এসেছে - লাল, বেগুনি, সাদা এবং কালো। তবে কমলা গাজরের সাথে কমলা রাজপরিবারের যে ক্ষীণ একটা সম্পর্ক আছে সেটা ইতিহাসে জাজ্বল্যমান। সাবমেরিনঃ যুদ্ধ কিংবা সীমান্ত পাহারায় সাবমেরিন আজ একটি অতি পরিচিত নাম। ডাচ বিজ্ঞানী এবং প্রকৌশলী কর্নেলিস ইয়াকোবসজন ড্রেবল ষোলশ কুড়ি সালে পানির নীচে চলার উপযোগী ও কার্যকারী সাবমেরিন প্রথম ডিজাইন করেছিলেন। তিনি তখন বৃটিশ রাজকীয় নৌবাহিনীতে কাজ করছিলেন, তিনি চামড়া ঢাকা কাঠের ফ্রেমের চলাচল যোগ্য সাবমেরিন তৈরি করেছিলেন। এর প্রথম পরীক্ষামূলক ভ্রমণ টেমস নদীতে হয়েছিলো। ষোলশ বিশ থেকে ষোলশ চব্বিশের মধ্যে ড্রেবেল আরও দুটি সাবমেরিন সফলভাবে তৈরি ও পরীক্ষা করে, প্রতিটি আগেরটির চেয়ে বড়। চূড়ান্ত (তৃতীয়) মডেলটিতে ছয়টি ওয়ার ছিল এবং ষোল জন যাত্রী বহন করতে পারে। এই মডেলটি রাজা প্রথম জেমস এবং কয়েক হাজার লন্ডনবাসীর কাছে প্রদর্শিত হয়েছিল। সাবমেরিনটি তিন ঘন্টার জন্য পানিতে নিমজ্জিত ছিল এবং ওয়েস্টমিনস্টার থেকে গ্রিনউইচ যেতে ও আসতে পারতো, বারো থেকে পনের ফুট (চার থেকে পাঁচ মিটার) গভীরতায় ভ্রমণ করতে পারে। ড্রেবেল এমনকি রাজা জেমসকেও এই সাবমেরিনে টেমসের তলদেশে একটি পরীক্ষামূলক ডাইভে নিয়ে যান, যার ফলে রাজা জেমস হলো প্রথম রাজা যিনি পানির নিচে ভ্রমণ করেন। এই সাবমেরিনটি টেমস-এ বহুবার পরীক্ষা করা হয়েছিল কিন্তু নৌপ্রধানকে এটি যথেষ্ট আকৃষ্ট করতে পারেনি আর তাই এটি কখনও যুদ্ধে ব্যবহার করা হয়নি। দ্যা স্টক মার্কেটঃ বিশ্বব্যাপী কিপ্টে হিসেবে বেনিয়া ডাচদের খানিকটা নাম আছে। এরমধ্যে প্রচলিত ও জনপ্রিয় হলো “গোয়িং ডাচ”, যার মানে, একসাথে সবাই খেতে গেলেও যার যার খরচ সে নিজে পরিশোধ করবে। এই কিপ্টে ডাচেরাই স্টক মার্কেট চালু করে পৃথিবীশুদ্ধ বানিজ্যের ধারনা পরিবর্তন করে দিলো। আধুনিক বিশ্বে এর মাধ্যমে এখন হাজার হাজার মানুষের ভাগ্য বদলে যায়। ডাচ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির দীর্ঘ বাণিজ্য-ভিত্তিক সমুদ্রযাত্রার অর্থায়নের উপায় হিসাবে, ডাচ আইনপ্রণেতা এবং ব্যবসায়ীরা ষোলশ দুই সালে প্রথম শেয়ার বাজার উদ্ভাবন করেছিলেন। সামাজিক অবস্থান নির্বিশেষে প্রত্যেককে সমুদ্রযাত্রায় বিনিয়োগের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। মূলধন বাড়াতে কোম্পানিটি স্টক বিক্রি করার এবং বিনিয়োগকারীদের শেয়ারের লভ্যাংশ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তারপর ষোলশ এগারো সালে, আমস্টারডাম স্টক এক্সচেঞ্জ তৈরি করা হয়েছিল। বহু বছর ধরে, ডাচ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শেয়ার কেনাবেচা করা এক্সচেঞ্জে একমাত্র ব্যবসায়িক কার্যকলাপ ছিল। স্টক মার্কেটের ব্যাপক প্রসার ষোলশ দশকের নেদারল্যান্ডসের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধিতে সহায়তা করেছিল। শুধু স্টক মার্কেট নয়, উনিশো আটাশি সালে “ফেয়ার ট্রেড লেবেল”ও বাজারে নিয়ে আসে দুইজন ডাচ। এই সার্টিফিকেট পাওয়া পন্যগুলো বাইরের বাজারে সব ভোক্তাদের কাছে ন্যায্য দামে পৌঁছাতে পারে। এটি গ্রাহক ও উৎপাদক উভয়ের মাঝেই এই বিশ্বাস ও সাম্যতার প্রতীক। দ্যা অলিম্পিক ফ্লেইমঃ উনিশো আটাইশ সালে, স্থপতি ইয়ান উইলস আমস্টারডামের অলিম্পিক স্টেডিয়ামে কাজ করছিলেন। তিনি একটি লম্বা টাওয়ারের নকশা করেছিলেন যেটি থেকে ধোঁয়া বের হয়েছিল। উইলস আগুনের শিখার চেয়ে ধোঁয়ার প্রতি বেশি মনোযোগী ছিলেন কারণ এটি দিনের বেলা আরও দৃশ্যমান হবে। তারপর থেকে, আগুন অলিম্পিকের একটি ঐতিহ্যগত অংশ হয়ে ওঠে, যদিও উনিশো ছত্রিশ সাল বার্লিন গেমস পর্যন্ত ক্রীড়াবিদরা এই ফ্লেইমটি বহন করেন নি। বহুল আলোচিত ডাচ আবিস্কারের মধ্যে আরো আছে মাইক্রোস্কোপ, টেলিস্কোপ, ম্যান মেইড আইল্যান্ড, ফায়ার হোস, স্পীড ক্যামেরা ইত্যাদি। অত্যন্ত পরিশ্রমী এবং নিয়ম মানা ডাচ জাতি খুব বেড়াতে ভালবাসে। আড়ম্বরহীন স্বভাবের ডাচদের পৃথিবীর খুব কম কোনা আছে যেখানে খুঁজে পাওয়া যাবে না। সামান্য সুযোগ পেলেই পিঠে ব্যাকপ্যাক কিংবা ক্যারাভান নিয়ে বেড়িয়ে পরেছে। দুই হাজার আঠারো সালে ওইসিডি প্রকাশিত “উন্নততর জীবন সূচক” ক্যাটাগরিতে নেদারল্যান্ডস “ওয়ার্ক লাইফ ব্যালেন্সে” বিশ্বে প্রথম স্থান অধিকারী রাষ্ট্র। কাজের আর বিশ্রামের এরকম সমন্বয় পৃথিবীতে খুঁজে পাওয়া ভার। তানবীরা হোসেন ০১/১১/২০২১

No comments:

Post a Comment