Tuesday 16 November 2021

“রেহানা মরিয়ম নূর”

“রেহানা মরিয়ম নূর” অনেকে বলছেন “ওভাররেটেড” আবার অনেকে বলছেন “মাস্টারপিস”। আমি বলবো, খুবই বাস্তবধর্মী একটি স্ক্রিপ্ট এবং অবশ্যই আন্তর্জাতিক মানের। মেকিং খানিকটা ইরানী ছবিগুলোর সমতূল্য। বাংলাদেশে পড়াশোনা করা অনেক মেয়েই শিক্ষক বা হুজুরদের দ্বারা যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছে। যারা ফিজিক্যালি হয়নি তারাও ভারবাল এবিউজের স্বীকার হয়েছে। এধরনের বাস্তব সমস্যাগুলো এড়িয়ে চলচিত্র নির্মাতারা নিরাপদ স্ক্রিপ্টে কাজ করেন। সেদিক দিকে সাদের এই চেষ্টা সাহসী ও প্রশংসনীয়। সেট, সংলাপ, পোশাক সময়টিকে প্রচন্ডভাবে উপস্থাপন করে, কিছুই আরোপিত লাগেনি। রেহানা সারাক্ষণ মাথায় কাপড় দেয়া, বোরকা টাইপ পরা, যেটা অধুনা বাংলাদেশকেই উপস্থাপন করেছে। দু’একটা জিনিস না লিখলেই নয়, এনি যখন জিজ্ঞেস করলো, “ম্যাম আপনার সাথেতো কিছু হয় নাই, আপনি কেন এমন করতেছেন।“ এই কথাটি জিজ্ঞেস করলো ঘরের ভেতর, পরের দৃশ্য বারান্দায় এনিকে জড়িয়ে রেখেছে রেহানা। সম্ভবত প্রশ্ন করেছে রাতে আর জড়িয়ে ধরা দিনে। খাপছাড়া। পুরো সিনেমাটায় একটা ব্লু ফিল্টার দেয়া। এ দিয়ে পরিচালক বা চিত্রগ্রাহক কি বোঝাতে চেয়েছেন তারাই জানেন। দিন না রাত, আশেপাশে রঙ, ড্রেসের রঙ কিছুই ঠিক করে বোঝা যায়নি যেটি সিনেমাটার মান কমিয়েছে। আর ক্যামেরার কোন লং শট নেই বললেই চলে, টিভি নাটকের মত অভিনেতা অভিনেত্রীদের মুখে মুখে সেটে সেটে ক্যাম ধরা, সিনেমার ওয়াইড এংগেল ব্যাপারটা খানিকটা মিসিং। কাহিনী নিয়ে অনেকেই লিখেছেন আমি আর সেগুলোতে গেলাম না। একটা জিনিস খুবই চোখে লাগার মত, “রেহানা” চরিত্রটিকে যথেষ্ঠ সাহসী, আপোষহীন আর জেদী দেখানো হয়েছে। বাস্তবে এ ধরনের মানুষ খুব ঠান্ডা মাথার হয়, রেহানা চরিত্রটিকে এখানে কোথাও কুল দেখানো হয়নি। সিনেমার শেষ দৃশ্যটি, নিজের মেয়ের সাথে যা ব্যবহার দেখানো হলো, তাও একজন ডাক্তার, প্রফেশনাল মা চরিত্রের কাছ থেকে, এটি পুরোপুরি অগ্রহণযোগ্য। ইউরোপে হলে, চাইল্ড এবিউজের চার্জ লাগতো গায়ে। এর বাইরেও, বাচ্চা মেয়েটির কষ্ট মা বুঝলো না, তাকে কিভাবে সান্ত্বনা দিতে হবে, মা জানে না, জানবে না! হইচইতে সৃজিতের সিরিজ “রেক্কা”তে বাঁধনের অভিনয় দেখেছিলাম আগে। নায়িকা হিসেবে সুন্দর সুন্দর ছবিতো দেখেছিই। এই সিনেমার গল্প আর ডিরেকশান দুটোই ভাল, বাঁধন শক্তিশালী অভিনেত্রী আর অভিনয়ও করেছে ভাল। এর বাইরে ব্যক্তি বাঁধনকেও আমার খুব পছন্দ। বাংলাদেশে বসবাসকারী মিডিয়াকর্মী হিসেবে তিনি যথেষ্ঠ বোল্ড। নুসরাত ফারিয়া টাইপ অভিনেত্রীরা যেখানে শুক্রবারে এক ঢং অন্যবারে অন্য ঢং করে সেখানে তিনি বেশ নিজের মত করে গুছিয়ে, ভনিতা ছাড়া নিজের জীবন যাপন করছেন। অনেকেই অবশ্য পরে বদলে গেছেন, আশাকরছি বাঁধন এরকমই থাকবেন, বদলাবেন না। নিজের কাজটাকে ভালবাসবেন, বিশ্বাস করবেন, সস্তা জনপ্রিয়তার লোভে জনগনের সাথে প্রতারণা করবেন না।
তানবীরা হোসেন ১৬/১১/২০২১

No comments:

Post a Comment