Thursday 25 November 2021

বুক রিভিউ – প্যারাডক্সিক্যাল সাজিদ

সেমিটিক ধর্মের ধারনা আর সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব নিয়ে পাঠা মৌলবাদী আরিফের সাথে কথাকথিত যুক্তিবাদী সাজিদের তর্ক হয়। কথাকথিত যুক্তিবাদী সাজিদ সারারাত আরিফের যুক্তিগুলো ভাবে। বইআনুসারে এত অকাট্য সব যুক্তি ছিলো যে তাতে মানসিকভাবে পরাস্ত সাজিদ সকালেই শক্ত ভাবে ঈমান আনে, এবং আর কোনদিন পথচ্যুত হয় না। বইয়ের শুরুটি হয় এভাবে। সৃষ্টিকর্তার সন্ধান পেতে বা তার কাছাকাছি যেতে মুনী, ঋষি, দরবেশ, আউলিয়ার কথাতো বাদ, স্বয়ং নবী মুহাম্মদ (সাঃ)কে পনের বছর হেরা পর্বতের গুহায় সাধনা করতে হয়েছিল। আর সাজিদ তার সন্ধান পেয়ে যায় মাত্র এক সন্ধ্যায়, ব্যাপারটা ইন্টারেস্টিং না? হ্যাতেরে খানিকটা মুফাসসিল ইসলামের মত লাগে না? সুবিধামত এদিকে আর ওদিকে। লেখক তার বইয়ে আনন্দাশ্রু গোপন করেন নাই, তিনি লিখেছেন, “ জানিস, এক সময় যুবকেরা হিমু হতে চাইতো। হলুদ পাঞ্জাবি গায়ে দিয়ে, মরুভূমিতে গর্ত খুঁড়ে জ্যোস্না দেখার স্বপ্ন দেখতো। দেখিস, এমন একদিন আসবে, যেদিন যুবকেরা সাজিদ হতে চাইবে। ঠিক তোর মত।“ কথা বিফলে যায় নাই, পাঠা থেকে রাম পাঠায় পুরো উপমহাদেশ সয়লাব। আসেন বই থেকে এবার দুইটা জ্ঞানের কথা শুনি ---- স্রষ্টা কেন মন্দ কাজের দায় নেবেন না? আল্লাহতায়ালা মানুষকে সৃষ্টি করেছেন। মানুষকে হাত-পা-চোখ-নাক, কান, মুখ, মস্তিস্ক এসব দিয়ে দিয়েছেন। সাথে দিয়েছেন একটি স্বাধীন ইচ্ছাশক্তি। এখন এসব ব্যবহার করে সে যদি কোন ভাল কাজ করে, তবে তার ক্রেডিট স্রষ্টাও পাবেন কারণ যন্ত্রগুলো আল্টিমেটলি তার দান। আর এসব ব্যবহার করে মানুষ যদি কোন খারাপ কাজ করে তার দায় সম্পূর্নই মানুষের, জিনিস আল্লাহর দান হলেও এখন আর তিনি দায়ভার নেবেন না। কারণ তারে স্বাধীন ইচ্ছাশক্তি দিয়েছিলো ভাল কাজ করতে, করে নাই সেটার দায় তার। এবার আসি একটি সাম্প্রদায়িক আয়াত এবং আয়াতটি হলোঃ “হে বিশ্বাসীরা! তোমরা মুমিন ব্যতীত অন্য কাউকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না।“ লেখকের মতে এর আসল মানে হলো, “ হে বিশ্বাসীরা! তোমরা অমুসলিমদের অভিভাবক হিসেবে গ্রহণ করো না।“ কারণ একজন অভিভাবক হলো সে-ই, যে আমাদের যাবতীয় গোপন খবর জানবে, আমাদের শক্তি, আমাদের কৌশল, আমাদের দুর্বলতা জানবে। অমুসলিমরা আমাদের সিক্রেট জানলে হিতে বিপরীত হতে পারে। যেমন, এমেরিকা, রাশিয়া বা চীনের কাছে তার সামরিক শক্তির কথা ফাঁস করে না। তো, কনক্লশান টানলে বোঝা যায়, অমুসলিমদের সাথে মুসলিমদের বন্ধুত্ব হবে এমেরিকার সাথে চীনের মত। হুম, উদাহরণ তো আছেই সামনে, সুজলা সুফলা "সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি"র বাংলাদেশ। স্রষ্টা যদি দয়ালুই হবেন তাহলে জাহান্নাম কেন? বাঁচার উপকরণ, অর্থ্যাৎ লাইফ জ্যাকেট তোমার দিকে বাড়িয়ে দিয়েছি। এখন তুমি তোমার স্বাধীন ইচ্ছাশক্তি প্রয়োগ করে জ্যাকেটটি গ্রহণ করে প্রাণে বাঁচবে নাকি ডিনাই করে মৃত্যুকে বরণ করবে সেটা সম্পূর্ণ তোমার ব্যাপার। আমি ধরে নিচ্ছি পাঠা এখানে পবিত্র কোরানকে লাইফ জ্যাকেটের সাথে তুলনা করছে। আরজ আলী মাতুব্বরের মত আমি এখনো বুঝছি না, আমি সব কথা পালন করলে, স্রষ্টার দয়ালু হওয়ার অপশান কোথায়? আর কথা না শুনলে যদি শাস্তিই দেন তাহলে তিনি মানুষের চেয়ে উর্ধ্বে এই ধারনায় কি করে আসেন? রক্ত মাংসের মানুষের মতই তার অনুভূতি আর আচরণ, নয় কি? হুমায়ূন আজাদ, আরজ আলী মাতুব্বর, অভিজিৎ রায় এদের সাথে বাস্তবে পাঠাটার আই মিন লেখকের দেখা হইলে খাইতো দুইটা থাবড়া তাই সেদিক দিয়ে সে হাঁটে নাই। বাংলা সিনেমার আদলে স্বপ্ন দৃশ্য তৈরী কইরা সেই জ্যাম্বস গ্রুপের স্টাইলে ফাইট দিছে তাদের সাথে। তবে বাস্তবে তাদের সংস্পর্শে আসতে পারলে হয়ত এই বই অন্যভাবে লেখা হতো কিংবা আদৌ হতো না, অবশ্য তারা এই পাঠাকে তাদের সাথে কথা বলার যোগ্য ভাবতেন কিনা সেটা আলাদা তর্ক। পুরো বইটা পড়ে অবশ্য আমি একটা লাইনও খুঁজে পাইনি যেখানে পাঠাটা নতুন কিছু বলছে যেটা শুক্রবার শুক্রবার মসজিদের খুতবায় হুজুররা আগে বলে নাই যাহোক পরিশেষে বলি, এদের জ্ঞান দাও প্রভু এদের পাঠা আই মিন ক্ষমা করো।

No comments:

Post a Comment