Wednesday, 29 July 2020

কোভিড ১৯





লং পার্কিং পুরো সাইলেন্ট ছিলো। রাত তিনটায় আমাদের গাড়ি ঢুকলো, আমরা চারটে পর্যন্ত সেখানে ছিলাম আর কোন গাড়ি আসেনি এ সময় এর মধ্যে যদিও পার্কিং এ আরও গাড়ি দেখা যাচ্ছিলো যেগুলো আগেই পার্ক করা ছিলো। শাটলের জন্যে চারটা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হলো, প্রায় এক ঘন্টা। শাটলের ড্রাইভার শুধু আমাদের ড্রপ করতেই এসেছে, আমরা ছাড়া শাটলে আর কেউ ছিলো না। শাটলে মাস্ক কম্পাসারি।
ভোর সাড়ে চারটায় শার্লোয় এয়ারপোর্টের পার্কিং প্রায় নিস্তব্ধ। আমাদের ছাড়া হয়ত আর জনা দশেক লোক ছিলো পুরো পার্কিং এ। এয়ারপোর্টে মাস্ক কম্পালসারি, হাত স্যানিটাইজ করে ঢুকতে হলো আর লেখা ছিলো গায়ের টেম্পারেচার আটত্রিশ ডিগ্রী সেলসিয়াস থাকল এয়ারপোর্টে ঢোকা নিষেধ। এয়ারপোর্টে প্রায় প্রতি পাঁচশো মিটার দূরত্বে হ্যান্ডস্যানিটাইজার রাখা আছে। জীবনে প্রথমবার দু মিনিটের মধ্যে সিকিউরিটি চেক আর লাগেজ ড্রপ ফিনিশ করে ভাবলাম হয়ত প্রাইভেট জেটে যাওয়ার আনন্দ পাবো, লোক নেই।
কফি নিয়ে বসলাম এয়ারপোর্ট রেস্টুরেন্টে, তাতে ফর্ম নিয়ে এলো। রেস্টুরেন্টের সব মেহমানদের তাদের ডিটেলস দিয়ে যেতে হবে, দিলাম ফর্ম ফিলাপ করে। বোর্ডিয়ের জন্যে কল করতে হেলেদুলে যাচ্ছিলাম, ভাবলাম কেউ তো নেই কিন্তু যেয়ে চক্ষু চড়ক গাছ। পুরো লাউঞ্জ ফুল। তবুও টেনশানের কিছু নেই, বোর্ডিং পাশে তো সিট নম্বর আছেই কিন্তু দাঁড়াতে হলো অনেকক্ষণ। একশো আশি সিটের প্লেনে একটি সিটও খালি ছিলো না।
মার্সাই এয়ারপোর্টে দেখলাম বায়োমেট্রিক পাসপোর্টের জন্যে আলাদা গেট করে দিয়েছে। আমার এই প্রথম অভিজ্ঞতা। পালে পাসপোর্ট স্ক্যান করলে একটা গেট খুলে যাবে, সেখানে ক্যামেরায় তাকালে, মুখ স্ক্যান হয়ে, মিলে গেলে পরের গেট খুলে যাবে, কারো সাথে কথার দরকার নেই, একা একা নিরিবিলি বেড়িয়ে যাও। পেছনের গেট আটকা, মুখ স্ক্যান হচ্ছে, মাস্ক থাকাতে এরর এলো, মাস্ক সরাতে ম্যাসেজ এলো টিভিতে, আবার স্ক্যান হয়ে পরের দরজা খুললো, ব্যাপারটা খানিকটা সাফোকেটিং, ক্লাস্টার ফোবিয়া যাদের আছে তাদের আরও ভয়াবহ হবে, আর সাথে ইমিগ্রেশানের কিছু লোকের চাকরি গেলো।

29/07/2020

Saturday, 25 July 2020

অনিল বাগচীর একদিন


বহু প্রতীক্ষার পর দেখতে পেলাম মোরশেদুল ইসলামের পরিচালনায় হুমায়ূন আহমেদের মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক উপন্যাসের চিত্রায়ন “অনিল বাগচীর একদিন” (২০১৫)। মোরশেদুল ইসলামের পরিচালনায় এর আগেও জাফর ইকবালের লেখা “আমার বন্ধু রাশেদ” (২০১১) আর মাহমুদুল হকের লেখা “খেলাঘর” (২০০৬) যুদ্ধভিত্তিক উপন্যাসের চলচিত্রায়ন দেখেছিলাম। “খেলাঘর” দেখে আমি মুগ্ধ হয়েছিলাম, অত কম ভায়োলেন্স দেখিয়ে অত গভীরভাবে যুদ্ধের ক্ষত আর বেদনা খুব কম সিনেমাই তুলে ধরতে পেরেছে। দুহাজার বারো সালে কলম্বোতে অনুষ্ঠিত সার্ক চলচিত্র উৎসবে এই সিনেমার জন্যে মোরশেদুল ইসলাম শ্রেষ্ঠ পরিচালকের পুরস্কার পান। কিন্তু অসংখ্য জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পুরস্কার পাওয়া “অনিল বাগচীর একদিন” আমাকে যারপর নাই হতাশ করেছে।

অত্যন্ত দুর্বল চিত্রনাট্য। অসংখ্য জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পুরস্কার বিজেতা মোরশেদুল ইসলামকে এখানে খুঁজে পাওয়া ভার। অতো আবেগী আর বোকা বোকা কাজ দিয়ে বাংলাদেশ তার স্বাধীনতা অর্জন করেছে! একজন আত্মসচেতন নাগরিক হিসেবে একজন বলতেই পারে, আমি মিলিটিরির পাস নিয়ে ঢাকার বাইরে যাবো না। কিন্তু বাকি যা সব দেখানো হয়েছে, তা নিতান্ত জেনে বুঝে আত্মহত্যার সামিল, এতে না দেশের প্রতি কোন দায়িত্ব পালনের কিছু দেখানো হয়েছে না পরিবারের প্রতি। যার  নিজেকে রক্ষা করার কোন দায় নেই সে অন্যের পাশে কি দাঁড়াবে? আর আইয়ূব আলী চরিত্রটির মুখ দিয়ে সমানে অতি পরিচিত হুমায়ূনীয় যে সংলাপগুলো বের হয়েছে তা চলচিত্রটির ভাবগম্ভীরতার গুরুত্ব কমিয়েছে, চলচিত্রটির স্বার্থে সংলাপ গুলোর সম্পাদনা জরুরী ছিলো।

হ্যাঁ অনিল বাগচীকে এখানে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে দেখানো হয় নি, যুদ্ধের সময়ে একজন মানুষের অসহায়ত্ব তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু একটা তরতাজা যুবক যে যুদ্ধের সময়ও অফিস যাচ্ছে, কাজ করছে সে কি সত্যিই এতটা অসহায়? বাংলাদেশের সাধারণ শান্তিপ্রিয় মানুষের প্রতিনিধিও সে করে না, কারণ এই সরল কোমলমতি মানুষেরা যথেষ্ঠ অসৎ, মিথ্যেবাদী ও ধান্ধাবাজ তাও সেই শায়েস্তা খাঁ’র আমল থেকেই। আমার কথা না, ইতিহাস সাক্ষী। 

সিনেমায় বেশ কয়েকটি চরিত্র ছিলো যেগুলোর পর্দা উপস্থিতি ছোট হলেও গুরুত্ব ছিলো অপরিসীম। পরিচালক তাদের থেকে স্বতস্ফুর্ত অভিনয় আদায় করতে ব্যর্থ হয়েছে। অত্যন্ত আরোপিত লেগেছে তাদের অভিনয়।

মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে অসংখ্য ভাল সিনেমা ইতিমধ্যে তৈরী হয়েছে বাংলাদেশে, সে তুলনায় এটিকে আমার নিতান্ত দুর্বল চিত্রনাট্যের একটি ব্যর্থ প্রয়াস বলে মনে হয়। সিনেমাটি দেখার সুযোগ করে দেয়ার জন্যে হৈ চৈ’কে অসংখ্য ধন্যবাদ।

২৬/০৭/২০২০

Tuesday, 21 July 2020

এক নজরে কিছু চলচিত্রের চালচিত্র – দুই

বনফুলের “অর্জুন মন্ডল” গল্পের অর্জুন কাকার মত মহা উৎসাহী মানুষ আমি, তিনি পড়াশোনা করতেন আর আমি সিনেমা দেখি, কিন্তু উৎসাহ-উদ্দীপনা আমাদের সমান। সেই উৎসাহ থেকে সদ্য দেখা কিছু সিনেমার সিনোপসিস

মহানায়িকা (২০১৭)ঃ পরিচালক সৈকত ভকত তাঁর প্রথম ছবি ‘মহানায়িকা’-র নামভূমিকায় বেছে নিলেন ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তকে। ছবির নাম শুনেই মনে হতে পারে, এ ছবি সুচিত্রা সেনের বায়োপিক না হয়ে যায় না। কিন্তু পরিচালকের মতে, ‘মহানায়িকা’-র কেন্দ্রীয় চরিত্র শকুন্তলা-র সঙ্গে যেমন মিসেস সেনের জীবনের মিল রয়েছে, তেমনই এই চরিত্রের মধ্যে খুঁজে পাওয়া যেতেই পারে মেরিলিন মনরো অথবা সোফিয়া লোরেনকেও। সিনেমাটা প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত একদম টানটান ধরে রাখবে। অনেক সম্ভাব্য পরিনতির কথা মনে আসবে কিন্তু শেষ পর্যন্ত পরিনতি অন্যদিকে গড়ায়। স্পয়লার দিলাম না। এই ছবিতে ঋতুপর্ণার সঙ্গে অভিনয়ে রয়েছেন ইন্দ্রনীল সেনগুপ্ত এবং সাহেব ভট্টাচার্য।

ঢাকাই ছবি আর কোলকাতার ছবির মধ্যে একটা আশ্চর্য মিল হলো, এই দুই জায়গাতেই প্রোডাকশন নায়িকাদের জামাকাপড়ের পেছনে বাজেট খুব কম রাখে। কোলকাতার সিনেমায় তাও শাড়িগুলো চলে যায় কিন্তু ওয়েস্টার্ন গুলো একেবারেই অচল। একেতো ঋতুপর্ণার স্বাস্থ্য মাশাল্লাহ দারুণ, খাতে-পিতে খান্দান কি তারমধ্যে এরকম কোয়ালিটির ওয়েস্টার্ন!। হিন্দী আর ইংরেজি সিনেমায় নায়িকাদের যেমন থাকে ফিগার তেমন দেয়া হয় ডিজাইনার আউটলেটের টপ ডিজাইনারের জামাকাপড়। চোখ তাতে এত অভ্যস্ত যে, এই পার্থক্যটা সহজেই ধরা পরে আর নিদারুণ দৃষ্টিকটু লাগে।

মায়ের বিয়ে (২০১৫)ঃ সমাজে বেড়ে চলেছে “সিংগেল মাদার”। মায়েরা যুদ্ধ করে, বাচ্চা বড় করে, বাচ্চা তার জীবন নিয়ে সামনে এগিয়ে যায়, পেছনে থাকে মা তার একাকীত্ব নিয়ে। পরিচালক সুদেষ্ণা রায় আর অভিজিত্‍ গুহর ছবি ‘মায়ের বিয়ে’৷ আজকাল অনেক সন্তানই তাদের বাবা-মায়ের দ্বিতীয় পার্টনার খুঁজে পেতে, তাকে দ্বিতীয়বারের মত যুগল জীবনে প্রবেশ করতে উৎসাহ দিচ্ছে, পার্টনার খুঁজে পেতে সাহায্য করছে, এই কনসেপ্টের ওপর তৈরী করা এই সিনেমা। এই পরিচালকদ্বয়ের ছবিতে সবসময়ই থাকে কমিক রিলিফ৷ তারই মধ্যে সমাজ থেকে তুলে আনা নানা সিরিয়াস ইস্যু নিয়ে একটা মেসেজ তুলে ধরার চেষ্টাও থাকে৷ এবারও ফর্মুলা একই।


অসাধারণ একটা সিনেমার নাটকীয় সমাপ্তি হয় যেটির আদৌ কোন দরকার ছিলো না। “সুদক্ষিণার শাড়ি”র মত শেষের পনের মিনিট বাদ দিয়ে দিলে এটি উপভোগ্য একটি সিনেমা। মায়ের চরিত্রে শ্রীলেখা মিত্র, মেয়ের চরিত্রে সায়নি ঘোষ আরও অভিনয় করছেন সব্যসাচী চক্রবর্তী৷


সত্যি হলেও গল্প (২০০৯)ঃ রুপসী বাংলা টিভির জন্যে বানানো সিনেমা, এতে অভিনয় করেছে ঋত্বিক চক্রবর্তী আর অপরাজিতা ঘোষদাস। এই সিনেমার মন্বত্বর সংক্রান্ত সমস্ত তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে শ্রীপান্থর দায় বইখানি হতে। প্যারালাল সিনেমা দেখতে যারা ভালবাসেন তাদের ভাল লাগতে পারে এই সিনেমাটি। ঋত্বিক আর অপরাজিতা’র পরিমিত অভিনয় সিনেমাটিকে আরও শৈল্পিক করে তুলেছে।

জন্মদিন কথন ২০২০

বন্ধু ভান্দানা বলে, “যখন দেখবি সব কিছুর প্রতি জিরো টলারেন্স মনোভাব এসে গেছে, বুঝবি বয়স হয়ে গেছে”।

আমার মনে হয়, যখন ছোট ছিলাম তখন ভবিষ্যতের ভাবনায় বিভোর থাকতাম, এখন বাঁচি স্মৃতিতে, পুরনো দিনের কথা বেশি ভাবা মানেই বয়স হয়ে গেছে। এই করোনা কালে প্রায় সবাই ওয়ার্ক ফ্রম হোম করছি, বাচ্চারা অনলাইন স্কুল, এই সুর্বন সুযোগে প্রচুর ভিডিও কল, আড্ডা, গান বাজনা হয়। এক ফাঁকে বাচ্চারা শুরু করে দুষ্টুমি। তাদের দুষ্টুমি নিয়ে কথা বলতে যেয়ে শুরু হয় নিজেদের কথা। আম্মি পাশ থেকে বলে, একদম তোদের ছোটবেলা, তোদের মত ঠিক এভাবে লেগে থাকে। বাচ্চারা তখন শুরু করে, দিদু বলেছে তুমি এরকম করতে, পাপা ওরকম করতো, বড়মা এটা বলতো, তুমি আর পাপা অনেক মারামারি করতে ইত্যাদি প্রভৃতি আরও কত কি। কপট ধমক দেই ওদের, দিদু আমাদের সম্বন্ধে কোন ভাল কথা বলে না? কিন্তু অন্তরে অন্তরে আমিও জানি, আমার মা’ও স্মৃতিতেই বাঁচে, আমরা কাছে নেই, স্মৃতিটুকু ছাড়া আর আছে কি মায়ের।

অসুবিধা হলো, মারামারি করেছি সেটা মনে আছে কিন্তু কি নিয়ে মারামারি করতাম, সেগুলো ওরা বললেও মনে করতে পারি না অতো। সকালে পেপার পড়া নিয়ে মাঝে মাঝে নাস্তার টেবলে একচোট হত। নিয়ম ছিলো আব্বু পড়ার পর যে আগে ধরবে সে আগে পড়বে। কিন্তু আমি আগে নিলেও ভাইয়া টান দিতো, ফলাফলে পেপার ছিড়তো। আর হতো ডাল ঘেটে দেয়া নিয়ে, মারামারিতে আমি অলোয়েজ হারতাম, প্রতিশোধ ছিলো, ভাইয়া শুধু ডালের ওপরের পানি খায়, আর কিছু খায় না, স্কুলে যাওয়ার আগে গরম গরম ডাল টেবলে রাখলে আমি তাড়াতাড়ি চামচ দিয়ে ডালের ওপর-নীচ ঘেটে দিতাম, ভাইয়ার ডাল খাওয়া বরবাদ, তখন আর একচোট মার খেতাম।

আজকাল সোশ্যাল মিডিয়াতে সবকিছুর গ্রুপ আছে, স্কুল, কলেজ, ইউনি, পাড়া, আত্মীয়দের, কিসের গ্রুপ নেই। সারাদিন অফিসের কাজে যায়, প্রায় রোজই কিছু না কিছু ইস্যু নিয়ে ব্যস্ত থাকি, তার মাঝেই রুটিন করে ফেবু স্ক্রল করি, সমস্যা হলো পুরনো কিছুই আর মনে করতে পারি না, চিনতেও পারি না। অন্য একটা জগত, অন্য কোন জনমের কথা মনে হয়। অনেকেরই চেহারা কিংবা নামও আর স্মৃতিতে নেই। কেউ যদি বলে ক্লাশমেট ছিলাম মেনে নেই, কোচিংমেট ছিলাম তাও সই, পাড়ামেট ছিলাম, তাও পসিবল, আমাকে চিনতো, বিনা বাক্য ব্যয়ে মেনে নেই। স্মৃতির ভান্ডার পুরোই শূন্য। দুই দশক অনেক সময়, মানুষ, শহর, জলবায়ু সব পরিবর্তন হয়ে যায়। খুঁজে পাওয়া কিংবা মেলানো আর সম্ভব না। আমি চিনতে না পারলেও আমাকে কেউ কেউ চিনতে পেরে 
বসুন্ধরা বা পিংক সিটিতে জিজ্ঞেস করে , ফেবুতে ম্যাসেজ দেয়, তুমি স্বাতী না? তাতেই আমি ধন্য অনুভব করি, ভাল লাগে, পুরোপুরি মুছে হয়ত যাই নি এখনো। দেশে থাকলে নিশ্চয়ই অনেকখানি মনে থাকতো, পরিযায়ী পাখিদের স্মৃতি কি তত তীক্ষ্ণ হয় না? অল্প কিছুদিনের ছুটিতে দেশে যাই, তার অর্ধেক যায় বিভিন্ন শপিং মলে, রেস্টুরেন্টে আর রাস্তায় জ্যামে। অনেকদিন থাকি না বলে আর হুট করে আশেপাশের সব বাসায় যাওয়া হয়ে ওঠে না।

আগে ঢাকা পৌঁছে গাড়ি থেকে নেমে গেট দিয়ে বাসায় ঢোকার এই সামান্যকটি মুহূর্তের মধ্যেই আশেপাশে বাসার দারোয়ানরা দেখতো, তারা জানতো কে এসেছে ফিরে, দু’দিন না যেতেই তাদের মারফত খবর আসতো, খালাম্মা আপনারে বাসায় আসতে বলছে। কালের গহীনে এখন অনেক খালাম্মাই মিলিয়ে গেছে, পরিচিত দারোয়ানরাও নেই, ছোট হয়ে এসেছে আমার চলাচলের পরিধিও।

কেয়ারন্টিন এতদিন খেলা খেলা লাগলেও এখন সাফোকেটিং। ইউ-এস, বাংলাদেশ সবদিকে ট্রাভেল বন্ধ। মন চাইলে কিংবা কোন কারণে কোথাও যেতে পারবো না এই অনুভূতিটা দমবন্ধ করা। যাই কিংবা না যাই সেটা অন্য জিনিস কিন্তু যেতে পারবে না সেটা অন্য অনুভূতি দেয়।


পরিযায়ী হওয়ার আর একটা বড় অসুবিধে হলো, চুল রুপালি হতে শুরু করলেও মন রয়ে গেছে, যেখানে ছেড়ে এসেছি সেখানেই। বায়োলজিক্যাল ঘড়ি হয়ত টিকটিক করছে কিন্তু মনের ঘড়ি রোজ আকাশ ছোঁয়। জীবনের হয়ত সবচেয়ে অন্যরকম বছরটা পার করলাম। জন্মদিন নিয়ে চিরদিনই আমি খুব উচ্ছসিত থাকি, এবছরও তার কিছু কমতি হয় নি। কিংবা জীবনের এই গোধূলি বেলায় এসেও সে উৎসাহ একটুও কমে নি। জুলাই মাসের প্রথম দিন থেকেই মন কেমন কেমন করতে থাকে। জন্মদিন উপলক্ষ্যে ফ্রান্সবাসীকে তাদের ন্যাশনাল ডে’তে অভিনন্দন। যারা যারা আমাকে নিয়ে পোস্ট দিয়েছো, মেমোরি শেয়ার করেছো, অন্তরের অন্ত:স্থল থেকে আবারো ধন্যবাদ।
ভাল থেকো পৃথিবী, ভাল আছি আমি, আমার সকল বন্ধুদের ভালবাসা আর সকল শত্রুদের সাধুবাদ।

যেদিন উড়ে যাবো সেদিনও এতটা মায়াই থাকবে এই পৃথিবীর জন্যে।

Saturday, 27 June 2020

দ্যা করোনা ডায়রী অফ তাতা ফ্র্যাঙ্ক – ৮ {জুন}

করোনা নিয়ে প্রিমিয়ে রুতে’র আপাতত শেষ ভাষণ

বুধবারে প্রিমিয়ে রুতে ভাষণ দেবেন শুনে অফিস শুদ্ধ আমাদের সবার টেনশান শুরু হয়ে গেলো। টিমে ঘুরে ফিরে এক কথাই হচ্ছে, এবার না বলে বসে, সবাই অফিসে যেতে পারো। ঘুম থেকে জেগে, বিছানার পাশ থেকে ল্যাপটপ টেনে নিয়ে কাজ শুরু করার যে অভ্যাস তৈরী হয়েছে আমাদের, করোনার পরে সবচেয়ে বিগেস্ট চ্যালেঞ্জ হবে, ঘুম থেকে উঠে, তৈরী হয়ে অফিস যাওয়া। কানের পাশ দিয়ে এবার গুলি গেছে, এবারও বাড়ি থেকেই কাজ বলেছে যদিও ডিস্কোথেক আর নাইট ক্লাব ছাড়া পহেলা জুলাই থেকে মোটামুটি সবকিছুই দেড় মিটার ডিসটেন্স আর ডিসইনফেকশনের শর্তের নীচে এনে খুলে দিয়েছে। যা সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হওয়ার কথা ছিলো তা শুরু হলো দু’মাস আগে থেকে। হোয়াট আ র‍্যাপিড চেঞ্জ। ধারনা করা যায়, সামার ভ্যাকেশানের পর থেকে করোনা ভ্যাকেশান ওভার হয়ে যাবে, জীবনযাত্রা ভ্যাক্সিন ছাড়াই আপন গতিতে ফিরে আসবে।

জিম থেকে আগেই মেইল এসেছে, পহেলা জুলাই থেকে প্রতিবার ম্যাক্সিমাম এক ঘন্টার জন্যে যেতে পারবো এবং সময়টা আগে রিজার্ভ করে নিতে হবে। তাই এইটুকু জানতাম এবারের স্পীচে অনেক স্বাধীনতার আভাস আসবে। প্রাথমিক স্কুল আর ডে কেয়ার আগেই খুলে দিয়েছিলো, এবার দিল মাধ্যমিক স্কুল, স্পোর্টস সব খুলে, দেড় মিটারের বাধ্যবাধকতা আর তাদেরও নেই, শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ে দেড় মিটার সোশ্যাল ডিসটেন্স এখনও বাধ্যতামূলক। মেঘ মহাখুশী, আবার স্কুলে যেতে পারবে।

করোনা ইনফেকশান, মৃত্যু, ইনটেনসিভ কেয়ার স্ট্যাবিল ছিলো কিন্তু এখন কার্ভ নীচের দিকে নেমেছে। এখন এমন দিনও আছে যেখানে কোন “করোনা মৃত্যু” নেই। সবাইকে এজন্য ধন্যবাদ জানিয়েছে, সবার সহযোগিতা ছাড়া এটা কখনো সম্ভব ছিলো না। তিন মাসে এতটা উন্নতি কেউ আশা করে নি। ধারনা করা হয়েছিলো এক লক্ষ পঁয়ত্রিশ হাজার জন করোনা আক্রান্ত হবে আর তার মধ্যে পঁয়ত্রিশ হাজার জনকে ইনটেনসিভ কেয়ারে আনতে হবে কিন্তু সবাই নিয়ম মেনে চলাতে তার আর দরকার হয় নি। কিন্তু এখন সবাইকে সাবধানে থাকতে হবে যেনো, দ্বিতীয় ঢেউ না চলে আসে, আর তার জন্যে সবাইকে প্রস্তূত থাকতে হবে। জীবনযাত্রার প্রাথমিক সব নিয়মগুলো ঠিক থাকবে, সেগুলো বদলাবে না।

ইনডোরে একশো লোকের পার্টি এলাউড। আগে থেকে যদি রিজার্ভেশান আর কন্ট্রোল মীটিং করা হয় তাহলে যতজন ইচ্ছে ডাকা যাবে, কোন ম্যাক্সিমাম সংখ্যা নেই। কনসার্ট, ফাংশান ইত্যাদি সবই চলবে তবে দেড় মিটার ডিসটেন্সের বাধ্যবাধকতায়। চার্চ, সাংস্কৃতিক স্কুল, সাওনা, স্পোর্টস স্কুল সব চলতে পারে।

রিজার্ভেশান, চেক ইন্টারভিউ ছাড়া আড়াইশো জন মানুষ আউটডোরে জমায়েত হতে পারবে কিন্তু সেটা দাঁড়ানো জমায়েত হতে হবে, বসা নয়। এর আওতায় ওপেন এয়ার রেস্টুরেন্ট, ক্যাফে এগুলো পরবে না। তবে বার্বিকিউ, খেলাধূলা, উৎসব, ওপেন এয়ার কনসার্ট এগুলো চলতে পারবে সেখানে ম্যাক্সিমাম সংখ্যার বাধ্যবাধকতা থাকবে না তবে দেড় মিটার ডিসটেন্সের বাধ্যবাধকতা থাকবে। দোকানপাট, যাদুঘর, লাইব্রেরী এসবই দেড় মিটার ডিসটেন্সের আওতায় নিয়ে রিএরেঞ্জ করা হয়েছে তাই এখানেও আর ম্যক্সিমাম মানুষের ব্যাপারটা থাকবে না, যতজন ইচ্ছে আসা যাওয়া করতে পারবে। চিড়িয়াখানা, ওপেন মার্কেট, সামার মেলা এসবও পহেলা জুলাই থেকে চালু করা যাবে। কিন্তু এগুলো স্বাস্থ্যবিধি মেনে প্রস্তূত হতে কমপক্ষে অন্তত ছয় সপ্তাহ সময় লাগবে তাই ধরে নেয়া হচ্ছে, আগষ্টের দ্বিতীয় সপ্তাহের আগে কিছু চালু হচ্ছে না।

পাব্লিক ট্রান্সপোর্টের ক্ষেত্রে মাস্ক বাধ্যতামূলক থাকছে তবে পহেলা জুলাই থেকে বসেও ট্রাভেল করা যাবে। যদিও জরুরী প্রয়োজন ছাড়া পাব্লিক ট্রান্সপোর্ট ব্যবহার না করার পরামর্শ এখনও থাকবে। রিজার্ভেশান আর চেক ইন্টারভিউয়ের মাধ্যমে ট্যাক্সি, ট্যুরিং কার, ট্যাক্সি বাস সব কিছুই চালু হবে তবে সেখানেও মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক থাকবে। নিজের গাড়িতেও অন্যকে লিফট দেয়া যাবে কিন্তু মাস্ক পরতে হবে। দুটো টেবলের মাঝে যদি আবরণ দেয়া হয় তাহলে রেস্টুরেন্টেরও আর দেড় মিটার ডিসটেন্স মানার প্রয়োজন নেই। যৌনকর্মী’রা পহেলা জুলাই থেকে তাদের পেশায় ফিরতে পারবেন।

দেড় মিটার ডিসটেন্সের আওতায় সব ধরনের ইনডোর-আউটডোর খেলাধূলার স্কুল, ছোটদের-বড়দের সবার জন্যে সব চালু হবে পহেলা জুলাই থেকে। গানের রিহার্সেল ইত্যাদিও চলতে পারে।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানালেন, ইটালী, ফ্রান্স আর জার্মানীর সাথে নেদারল্যান্ডস ভ্যাক্সিন আবিস্কার আর সুলভ মূল্যে বাজারজাত করনের জন্যে প্রকল্প হাতে নিয়েছে। পানির সাথে যুদ্ধ করে বিজয়ী হয়ে বেঁচে থাকার ইতিহাস আছে নেদারল্যান্ডসের, সেই ইতিহাস বিফল হতে পারে না। আপাতত করোনা যুদ্ধে দু’মাস আগেই নেদারল্যান্ডস জয়ী হয়েছে, পহেলা সেপ্টেম্বর থেকে যে কন্ট্রোল ফেজ আসার কথা ছিলো তা পহেলা জুলাই থেকেই এসে গেলো। চিয়ার্স।

Friday, 19 June 2020

আকাশ কেন ডাকে মন ছুটে যায়


প্রায় এক বছর হয়ে গেছে প্রায় বাড়ি যাইনি। আমার বাড়ি, নিজের বাড়ি। যেখানে নিজের সবাই আছে, নিজস্বতা আছে, আর আছি আমার আমি। পা থেকে চটিটা খুলে ছুঁড়ে ফেলে দেয়ার স্বাধীনতা আছে, চিৎকার করে কাঁদার সুযোগ আছে, হা হা করে হাসার উপলক্ষ্য আছে। কারণে এবং অকারণে বোনদের জড়িয়ে ধরে সারা বিছানায় গড়াগড়ি খাওয়ার আনন্দ আছে। ভাইয়ের ওপর বিনা কারণে চেঁচানোর ফান্ডা আছে। আমার লাগানো মানিপ্ন্যান্টের লতা আছে, মায়ের হাতের বোগেনভিলিয়ার ঝাড় আছে। সারা ঘর জুড়ে মায়ের হাতের স্পর্শ আছে, ডাইনীং টেবলের ওপর রোজ ছাঁদ থেকে তুলে আনা তাজা পুঁদিনার ভর্তা আছে। তেমন কিছু হয়তো নেই উল্লেখ করার মতো আবার সব আছে।


বাসার জানালায় যেখানে বোগেনভেলিয়ার ঝাড় আছে, সেখানে হঠাৎ একদিন একটি পাখির বাসার দেখা পাওয়া গেলো। সবাই খুব উৎসাহী খুশি, যত্নআত্তি শুরু হলো। এলো আমফান, দেখা গেলো ঝড়ে নুইয়ে পরে বোগেনভেলিয়া টিকে গেলেও পাখির বাসাটা নেই, উড়ে গেছে। শুধু বাসা দেখে, ভেবে নেয়া সেই পাখি দুটোর জন্যে, তাদের ঝড়ে উড়ে যাওয়া বাসাটার জন্যে মন কেমন করে। টকটকে বোগেনভেলিয়া ফোটা সেই জানালাটায়, মনে মনে পাখিদের ডাক শুনতে আমি কতবার পায়ে পায়ে হেঁটে গেছি। অলস দুপুরে জানালায় দাঁড়িয়ে চা খেতে খেতে, রাস্তা দেখতে দেখতে আমি পাখি দুটোর সাথে এলোমেলো কত গল্প করেছি।

ভাইবোনের বাচ্চাগুলোর সাথে কচলাকচলি, জাপটাজাপটি মিস করি। মায়ের চুলের তেলের গন্ধ পাইনা আজ কতোদিন। আমার নিজের মেয়েটা রোজ কতো স্বপ্ন বুনে তার তুতো ভাইবোনদের নিয়ে সেগুলোতে রঙ মাখানো হলো না। ঠিক সন্ধ্যে নামার মুখে রবীন্দ্র সরোবরে এলোমেলো হাঁটা আর বটি কাবাব মিস করি। ধানমন্ডি পাঁচ নম্বরের মহুয়া চটপটি মিস করি, আট নম্বরের কোনের ঝালমুড়ি মিস করি, মুড়ি খেয়ে ঝালে পাগল হয়ে দোকানে ঢুকে কোক খাওয়া মিস করি। কোক খেতে খেতে আবার বীফরোল কিংবা চিকেন প্যাটিস সাথে চকলেট পেস্ট্রি মিস করি। এই গরমে স্বাস্থ্য রক্ষার জন্যে বাবার কড়া উপদেশ মাখা ঠান্ডা বেলের শরবত মিস করি। মায়ের আদর মাখা ঠান্ডা ডাবের পানি মিস করি। হাঁতে আঁটে না এত বড় আমের বড়া খাওয়া মিস করি, কনুই গড়িয়ে আমের রস না পড়লে কি আম খাওয়া হয়! ভ্রাম্যমান আদালতের ভিডিওতে দেখা সেই স্টারের পঁচা ফালুদা খেতে মন কেমন করে, প্রিমিয়ামে মিষ্টি কিনতে গেলে, টেবলে বসিয়ে যে নতুন মিষ্টি টেস্ট করতে দেয় তার জন্যে মন কেমন করে, জিঞ্জিরার মোগলাই আর সপ্তডিঙ্গার হালিমের জন্যেও মন কেমন করে। সারা ঢাকায় আখের রস বিক্রি হয়, আমি বলেছি, আখের রস খাবো না, আখ খাবো, বলেছি এবং এত খাবারের ভীড়ে যথারীতি ভুলেও গেছি। কিন্তু আনোয়ার খুঁজে খুঁজে মিষ্টি আখ এনেছে, এনেছে বুন্দিয়া আর মেঘের জন্যে ডালপুরী।

একটানা বর্ষনের সাথে যুদ্ধ করে যে ক্লান্ত কাকটা নিরিবিলি জানালার সানশেডে আশ্রয় নিয়ে তার ডানা দিয়ে গা চুলকায় তাকে মিস করি। স্যাঁতস্যাঁতে ঢাকা মিস করি, ঘেমো ঢাকা মিস করি, হাস্নাহেনার গন্ধ মিস করি। ভয়াবহ জ্যামটার জন্যও আজকাল খারাপ লাগে। বসুন্ধরার এক টিকেটে দুজনের সিনেমা দেখা মিস করি। খোঁজ দ্যা সার্চ এর অনন্তকে মিস করি। আশেপাশের বাড়ির নাম না জানা সব ছেলেগুলোকে মিস করি। যাদের ফ্যাশন–ফ্যুশন, চুল-দাড়ি নিয়ে হাসাহাসি করে আমরা অনায়াসে সময় পার করে দিতে পারি। গোধূলি বেলায় ছাঁদের ওপর দাঁড়িয়ে বিদায় নিতে থাকা গোমড়া মুখো সূর্যটাকে মিস করি আর তার সাথে মিস করি নীড়ে ফেরার আনন্দে হুটোপুটি করতে থাকা আনন্দিত সেই পাখির ঝাঁকটাকে। শেষ পূর্নিমার মলিন কিন্তু বড় আপন চাঁদটাকে মিস করি। ঢাকার বাইরের ট্রিপে গাড়িতে আন্তাক্ষরী খেলা মিস করি, ভয়াবহ ডেঙ্গু মশার কামড় মিস করি। ফেরা হবে না হয়তো আরো একটি বছর এই প্রিয় জিনিসগুলোর কাছে।

Wednesday, 17 June 2020

কথানদী

আঞ্চলিক চারটি লোক কাহিনীর ওপর ভিত্তি করে তৈরী করা হয়েছে “কথানদী”। ব্রক্ষ্মপুত্র নদীর তীর ঘেঁষা একটি গ্রামকে ঘিরে আবর্তিত হয়েছে এই কাহিনী। “আমিষ” এর পরিচালক ভাস্কর হাজারিকার প্রথম ছবি এটি।  The River of Fables) (2015) আমার দেখা দ্বিতীয় আসামিজ ছবি এটি। চারটি মায়ের কাহিনী সমগতিতে গড়ায় এই সিনেমায়। একটা আত্মবিশ্বাস গড়ে উঠেছিলো মনে, সিনেমা দেখতে বসে আর আগের মত কাঁদি না, ব্যথিত হই না, এখন জানি, এগুলো সিনেমা, মিথ্যে অভিনয়, সত্যি কিছু না। “কথানদী” সেই আত্মবিশ্বাস ভেঙে গুঁড়ো গুঁড়ো করে দিলো। The Conjuring, এক, দুই, তিন দেখে ভয় না পাওয়া মানুষ আমি, এই সিনেমার শেষের পনের মিনিট দেখতে মিনিমাম পাঁচটা ব্রেক নিয়েছি। মনস্থির করতে পারছিলাম না, দেখবো কি দেখবো না, নাকি শুধু শুনে নেবো। শরীর ঘেমে গেলো। যেহেতু অনুমান করতে পারছিলাম তাই সাহস করতে পারছিলাম না। তবুও বলবো, এত নৃশংসতা এত ডিটেইলে পর্দায় না দেখালেই কি নয়! মানুষ মেরে ফেলা এত সোজা! হবে হয়ত, সবাই কি আমার মত এত দুর্বল চিত্তের যে দেখতে হবে ভেবেই দিশেহারা।

 

লোককাহিনী একটা সময়ের একটা গোত্রকে উপস্থাপন করে, সে যুক্তিকে ধরলে, আমাদের লোভ, আমাদের অজ্ঞতা, আমাদের কুসংস্কার কত জন্মজন্মান্তরের ব্যাপার সেটা দেখে বিস্মিত হই। আমাদের এই কোনটার মত মনুষ্যহীনতা আর নৃশংসতা পৃথিবীর কোথাও খুঁজে পাওয়া হয়ত টাফ হবে। মায়ের মনে কত লোভ থাকলে অজগর সাপের মনি পাওয়ার লোভে মেয়েকে অজগরের সাথে বিয়ে দিয়ে দেয়। মেয়ে ঘর থেকে কান্না করে মা’কে ডাকছে আর মা বাইরে অপেক্ষা করছে, সোনা গয়নার। ঢেঁকিতে ফেলে সৎ মা কিশোরী মেয়ের মাথা কুঁটে ফেলেছে! কি করে সম্ভব। অথচ এই বয়সী মেয়ে আমার ঘরেও সারাবেলা নাচে, হাসে, ঘুরে বেড়ায়। কি নিষ্পাপ মুখগুলো। আবার সন্তানকে রক্ষা করার আকুলতায় চাচা শ্বশুরকে খুন করতে উদ্যত এক মা, সেই গল্পও আছে সিনেমাতে, আছে চালতা জন্ম দিয়ে, পরে মেয়েতে রুপান্তরিত হওয়ার লোকগাঁথাও।  

 

ভাস্কর হাজারিকা আর লেখক অরূপা কালিটা পাটানগিয়া লিখেছেন চিত্রনাট্য, “আঞ্চলিক ভাষা” ক্যাটাগরীতে ভারতের তেষট্রিতম জাতীয় পুরস্কার পেয়েছে এই সিনেমা। এছাড়াও দু’হাজার পনের সালের এশিয়ান সিনেমা ফান্ড’স পোস্ট প্রডাকশান ফান্ড এওয়ার্ড জেতে। বুসান, গোথেনবার্গসহ বিভিন্ন ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে দেখানো হয়েছে এই সিনেমা। Potlocker এ আছে, চাইলে দেখে নিতে পারেন। 


তানবীরা

১৮/০৬/২০২০