Tuesday 12 May 2020

এক নজরে কিছু চলচিত্রের চালচিত্র – এক

সিনেমা হয়ে উঠতে পারতো কিন্তু উঠেনিঃ

অসুর (২০২০) খাপছাড়া চিত্রনাট্যর ভিত, অবাস্তবতা। কিগান মান্ডি, বোধিসত্ত্ব ও অদিতি- তিন বন্ধুর সম্পর্কের চড়াই উতরাই এই ছবি। ১৫ বছর পরে কিগান আর্ট কলেজের প্রফেসর এবং বোধি বড় ব্যবসায়ী। অদিতি বোধির স্ত্রী এবং কিগানের বন্ধু, একমাত্র কাঁধ। আর এই কিগানের উদাসীন শিল্পীসত্ত্বা ও অদিতির প্রতি নির্ভরশীলতাই বোধির সঙ্গে অদিতির বৈবাহিক সম্পর্কে চিড় ধরিয়েছে। বিশ্বের সবথেকে বড় দুর্গা বানানোর চ্যালেঞ্জ নেয় কিগান, সাহায্য করে অদিতি। বাবার সঙ্গে কথা বলে, বোধির বিপরীতে দাঁড়িয়ে কিগানের পাশে মহীরুহ হয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়না। দেশপ্রিয় পার্কের ঘটনাকে আবেগের মায়াজালে বুনতে চেয়েছিলেন পরিচালক। তবে যুক্তিতে কম পড়ল। ভিড়, স্ট্যা্ম্পেড কিংবা কর্পোরেট- রাজনৈতিক যোগসাজস প্রতিটা রসদ থাকা সত্ত্বেও সেগুলো কাজে লাগল না। প্রাণহীন থেকে গেল। কোলকাতার অনেক পত্রিকা এই সিনেমার ভূয়সী প্রশংসা করলেও আমি বলবো, জিৎ, নুসরত জাহান, আবির চট্টোপাধ্যায় এর অভিনয়ে বিরাট একটা জগাখিচুরীর নাম অসুর। তবে সিনেমায় একটা ম্যসেজ আছে, আপনি যদি সরকারী উচ্চ পর্যায়ে যোগাযোগ করেন আর তারা আপনার দাবী না মানে, তারপর আত্মহত্যা করে ফেললে অবশ্যই আপনার দাবী তারাই আবার মেনে নেবেন। দাবী আদায় করার থাকলে আত্মহত্যার নাটক করা যেতে পারে।

ক্রিসক্রস (২০১৮)ঃ তারকাবহুল এই সিনেমায় কোন সেরকম গল্প নেই। তবে কোলকাতা বাংলা সিনেমার এ সময়ের মোটামুটি সব তারকাকে একসাথে দেখে ফেলতে চাইলে এই সিনেমাটি দেখে নিতে পারেন। আর একটু যত্নশীল হলে ২০১৩ সালে লেখা "সাদামাটা" উপন্যাসের ততোধিক সাদামাটা চলচ্চিত্রায়ন না-ও হতে পারত! পরিচালক বিরসা দাসগুপ্ত বোধহয় ওভার কনফিডেন্ট ছিলেন। ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিকের অতি ব্যবহার একঘেয়েমি লেগেছে। দিনের শুরুর সব সমস্যা দিনের শেষে যেভাবে সমাধান হয়ে গেলো, জিনি তাতে চাকুরীতে ইস্তফা দিয়ে সমুদ্রের নীচে আবার হয়ত মুখ লুকালো।

রবিবার (২০১৯)ঃ অতনু ঘোষ পরিচালিত সিনেমাটিতে প্রথমবার একসঙ্গে অভিনয় করছেন জয়া আহসান ও প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়। আদতে রোম্যান্টিক থ্রিলার 'রবিবার'। তাঁদের দুজনের অতীত সম্পর্ক নিয়েই সিনেমা। হঠাৎ এক রবিবার আবার দেখা হয় এই দুই চরিত্রের। গল্প বলার বিরাট একটা স্কোপ ছিলো এই সিনেমায়। খানিকটা রোমান হলিডে কনসেপ্টের এই সিনেমায় অনেক কিছু দেখানো যেতো, কিন্তু এক জায়গায় গিটটু লেগে রইলো সারাবেলা। জয়ার অভিনয় খুবই টিপিক্যাল ছিলো, শুদ্ধ বাংলায় বললে, ক্লান্তিকর, একঘেয়ে, ন্যাকা। ভালবাসার শহর, বিসর্জনের সেই জয়াকে কোথাও খুঁজে পাওয়া যায় নি। ভুরু কুঁচকে, সেই মনোটোনাস ভঙ্গীতে রাগ দেখিয়ে কথা বলার এই স্টাইলটা এখন খুব পুরনো, জয়ার অন্যকিছু ভাবা দরকার। প্রসেনজিৎ অসাধারণ অভিনয় করেছে, বুম্বাদার থেকে প্রসেনজিতে উত্তরণ লক্ষ্যনীয়। তবে গল্পে কোন চমক নেই, সময় নষ্ট, টাকা নষ্ট টাইপ মুভি।

আরশিনগর (২০১৫)ঃ অভিনেত্রী অপর্ণা সেনকে আমার যত না পছন্দ তারচেয়ে অনেক বেশি পছন্দ আমার পরিচালক অপর্ণা সেনকে। তার পরিচালনায় সবচেয়ে বাজে (আজ অব্ধি) ছবি বোধহয় এটি। সেক্সপীয়ারের “রোমিও জুলিয়েট” এর ভারতীয় সংস্করণ। বিশাল তারকাবাহিনী নিয়ে বানানো এই সিনেমার রোমিও হলো দেব! তারপরও দাঁতে দাঁত চেপে মুভি শেষ করেছি, শুরু করলে শেষ করতে হয় এই হাইপোথিসিস এর কারণে। এক বন্ধু বললো, দেব নাকি এখন ভারতের এম।পি। শুনে মনে হলো, ভারতের পার্লামেন্টের অবস্থা বোধহয় বাংলাদেশ থেকে বেশি সুবিধাজনক না। যারা যারা এম।পি শুনছি তাতে ভিরমি খাওয়ার যোগাড়।


No comments:

Post a Comment