ফাইন্যালি দ্যা রয়াল
নেদারল্যান্ডস স্টেপ্স এহেড, দ্বিতীয় ধাপ শুরু --- হুরররা
প্রথম
ধাক্কা কাটিয়ে উঠেছে নেদারল্যান্ডস, সেই অর্থে বলতে গেলে মোটামুটি পুরো সেন্ট্রাল
ইউরোপ। যত রেস্ট্রিকশান কমানো হবে ততো ইনফেক্টেড মানুষের সংখ্যা বাড়বে। হেলথ
মিনিস্টার হুগো ডি ইয়োনগেন বললেন, সারা দেশে সতেরশো আইসিইউ বেড আছে এখন, যদিও
সবাইকে সাবধান থাকতে বলা হয়েছে বারবার, দায়িত্বশীল আচরণ করতে বলা হয়েছে, নিজের
জন্যে নয়, অপরের জন্যে। আস্তে আস্তে করোনার বাইরেও আরো যে সব গুরুত্বপূর্ণ
অপারেশান আছে, চিকিৎসা আছে, সেগুলো শুরু করতে হবে। ডাচ গর্ভমেন্ট এই পরিস্থিতিকে
তিনটি ভাগে ভাগ করেছে, ১. বিস্ফোরণ পর্ব যা আমরা পার হয়ে এসেছি ২. উত্তরণ পর্ব যেটাতে আমরা
এখন আছি, ৩. নিয়ন্ত্রণ
পর্ব যেটাতে আমাদের যেতে হবে, এস্টিমেটেড টাইম পহেলা সেপ্টেম্বর। এখন আমরা পরবর্তী ধাপে এগোচ্ছি, স্ক্যান্ডিনেভিয়ায় বাচ্চাদের
স্কুল খুলে দেয়া হয়েছে, আমরা স্ক্যান্ডেনেভিয়াকে ফলো করতে চাই তাই উইথ সাম স্পেশাল রেস্ট্রিকশান বাচ্চাদের প্রাইমারি স্কুল,
ডে-কেয়ার এগুলো এগারোই মে থেকে খুলে দেয়া হয়েছে আর স্পেশাল কেয়ার স্কুল পুরোপুরি খুলে
দেয়া হয়েছে।
আইকিয়া
সরকারী বিধি-নিষেধ মেনে নিজেদেরকে রিএরেঞ্জ করে অবশেষে এপ্রিলের শেষে খুলেছে। রেস্টুরেন্ট-খাবার
দোকান, ক্যাফে, মুভি, থিয়েটারে সর্বোচ্চ ত্রিশ জন পর্যন্ত ইনক্লুডেড ওয়ার্কাস এগারোই
মে থেকে খুলেছে। তবে আগে থেকে রিজার্ভ করতে হবে, এবং রিজার্ভেশানের সময় জিজ্ঞেস করা
হবে, সর্দি, হাঁচি, কাশি, জ্বর আছে কিনা, এবং সবাই সত্যি উত্তর দেবে এই আশা করা হচ্ছে।
ইন এনি কাইন্ড অফ সিকনেস, স্টে এট হোম। পহেলা জুন থেকে মুভি, রেষ্টুরেন্ট ইত্যাদি একশো
জন এটেন্ড করতে পারবে। অবশেষে এগারোই মে থেকে হেয়ার ড্রেসার, বিউটি পার্লার, নেল সেলুন,
ফিজিওথেরাপি, আকুপাংচার, অপটিশিয়ান, লাইব্রেরী, মিউজিয়াম সব খুলছে, ওয়ান এন্ড হাফ মিটারের
সোশ্যাল ডিসটেন্সের ভিত্তিতে। আউটডোর স্পোর্টস এলাউড তবে পহেলা জুলাই পর্যন্ত বাড়িতে
গোসল করতে হবে। ইনডোর স্পোর্টস, জিম, ফিটনেস সম্ভবত পহেলা সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বন্ধ
থাকবে। সবকিছু পরিকল্পনা মত ঠিকঠাক চললে তবে, তৃতীয় ধাপে আগানো হবে, সব নির্ভর করবে
পরিস্থিতির ওপর। পহেলা জুন থেকে সবাই টেস্ট করাতে পারবে। আঠারোই মে থেকে পুলিশ, বাস-ট্রেন
চালক, টিচার, যারা লোকের সান্নিধ্যে নিয়ে কাজ করে তারা টেস্ট করাতে পারবে। এগারোই মে
থেকে, ওল্ডহোম, হসপিটাল ভিজিটর এলাউ করবে। হেলথ মিনিস্টার বলেছেন, স্বাস্থ্যখাতকে তিন
গুন বড় করা হয়েছে, সামনের সময়কে সামলানোর জন্যে।
ইউরোপের
অনেক দেশেই ইনফেশকানের কার্ভ নীচে নামাতে, পরিস্থিতি খানিকটা স্টেবল হওয়াতে, আস্তে
আস্তে রেস্ট্রিকশান কমানোর যে ধাপ সরকার নিচ্ছে, ডব্লু-এইচ-ও তাতে হুশিয়ারি দিয়ে বলেছে,
প্রথম ধাক্কা গেছে, সামারে আসবে দ্বিতীয় ধাক্কা, তৃতীয় ধাক্কার জন্যেও সবাইকে প্রস্তূত
হতে হবে। যতদিন কার্যকারী ভ্যাকসিন হাতে না আসছে, ততদিন ইমুনিটি ভরসা তবে আশার কথা
এই, সেকেন্ড –থার্ড ওয়েভে সংক্রমণের সম্ভাবনা কিছুটা কম। যদিও ভাল আবহাওয়ার কারণে সেভাবে
“স্টে এট হোম” অনেক ডাচেরা ধরতে গেলে একদমই মানে নি। পার্কে বার্বিকিউ, পিকনিক, হৈ
চৈ হয়েই যাচ্ছিলো। পুলিশ এসেছে, জরিমানা করেছে কিন্তু তারপর আবার যে কে সেই। তারপরও
পিক সামারে বাইরে বের হওয়া বাড়বেই বাড়বে, সেদিকটার জন্যে এখন থেকেই সবাইকে প্রস্তূত
হতে হবে। প্রতিবার সামারে বন্ধুরা প্রত্যেকেই বাড়ি যায় বা অন্য কোথাও বেড়াতে যায়, এবারের
সামার হবে (আপাতত আমার দেখা) একটা ব্যতিক্রমী সামার ভ্যাকেশান যে আমরা সবাই হল্যান্ডে
থাকবো, কোথাও যাবো না কারণ যেতে পারবো না। বাড়ি যাই কিংবা বেড়াতে যাই এর মধ্যেও বন্ধুরা
সবাই সবাই মিলে প্রতিবার পিকনিক কিংবা বার্বিকিউ করি, এবার সেটাও হবে না। নেদারল্যান্ডস
বর্ডার কখনো বন্ধ করে নি কিন্তু অন্যদেশ করেছে। তারা বর্ডার না খুললে হয়ত এবার নেদারল্যান্ডসের
ভেতরেই কোথাও ছুটি কাটাতে হবে। পহেলা জুন থেকে দেড় মিটার সোশ্যাল ডিসটেন্স মেইনটেইন
বাইরে টেরাসে বসা যাবে আর, পহেলা জুলাই থেকে ক্যাম্পিং, ভ্যাকেশান পার্ক এগুলো খুলে
দেয়া হবে।
“করোনা”
সহসা ওভার হওয়ার সম্ভাবনা নেই, প্রিমিয়ে বারবার ওয়ার্ক ফ্রম হোম বলেই যাচ্ছে। আমরা
ডিসেম্বর পর্যন্ত মানসিক প্রস্তূতি নিয়েছি। এটিকে পার্মানেন্ট হোম অফিস সেট করেছি।
অফিস থেকে বলা হয়েছে, সোশ্যাল ডিসটেন্স মেইনটেইন করে টিম ভাগ করে রোস্টার দেয়া হবে।
এক সপ্তাহ এই টীম অফিসে আসবে তো পরের সপ্তাহে ঐ টীম। তবে এই রোস্টার কতটুকু কার্যকর
হবে কে বলতে পারে, অনেকেই পাব্লিক ট্রান্সপোর্ট ব্যবহার করে অফিস আসতো আর এসময় সেটাতে
তারা এখন আগ্রহী না। অফিস কাউকে আসতে বাধ্যও করতে পারবে না। সরকারও পাব্লিক ট্রান্সপোর্ট
ব্যবহারে কাউকে উৎসাহী করছে না যদিও পহেলা জুন থেকে স্বাভাবিক নিয়মে সব ট্রেন-বাস চলবে
বলে বলা হয়েছে, তবে পাব্লিক ট্রান্সপোর্ট ব্যবহার করলে দেড় মিটার সোশ্যাল ডিসটেন্স
মেইনটেইন করা কষ্টকর হবে বিধায় মাস্ক ব্যবহার করা বাধ্যতামূলক বলা হয়েছে। নইলে জরিমানা
হবে। মাস্কের কথা বলায় প্রিমিয়েকে বিরাট সমালোচনা করেছেন খিয়ার্ট উইলডার্স, তার মতে,
মাস্ক দিয়ে কোন উপকার হয়েছে, কোথাও তো বলা হয় নি তাহলে মাস্ক কেন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে?
প্রিমিয়ে
রুতে তার ভাষণে লেছেন, “হাতের নাগালে সবকিছু থাকায় আজকাল এত দ্রুত খবর ছড়িয়ে যায় আর
তার চেয়ে অনেক দ্রুত মানুষ তার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে, কিন্তু সব ধরনের ব্যতিক্রমের
পেছনে কিছু কারণও থাকে। যত সামনের দিকে আমরা এগুবো তত নানারকম নতুন সমস্যার মুখোমুখি
হবো, সবকিছুর সমাধান আমার হাতের কাছে নেই। প্রতিদিনের সমস্যা প্রতিদিন আমাদেরকে পরিস্থিতির
সাথে সমাধান খুঁজে দেখতে হবে। প্রতিটি মিউনিসিপ্যালটিকে তার এলাকার পার্ক, শপিং সেন্টার
এসবের দায়িত্ব নিতে হবে, লোকজনের ভীড়ের দায়িত্ব তাদের। পাব্লিক ট্রান্সপোর্ট কে নানাভাবে
রিএরেঞ্জ করা হয়েছে, কম মানুষ যেহেতু এক বারে ট্রেনে বা বাসে চড়তে পারবে তাই বেশি বেশি
বাস আর ট্রেন চলাচল করবে, সারাদেশের মানুষদের খাবার-দাবার ইত্যাদি পৌঁছে দিতেও লজিস্টিক
কর্মীরা নিবেদিত প্রাণ ছিলেন তাই তারা এক্সট্রা ধন্যবাদ তো পেতেই পারেন। দ্বিতীয় ধাপ
আরও কঠিন, প্রত্যেককে দায়িত্বশীল আচরণ করতে হবে তবেই প্রথম সেপ্টেম্বর থেকে আমরা তৃতীয়
ধাপে যেতে পারবো। স্টে এট হোম, ওয়ার্ক ফ্রম হোম, ভীড় না করা, অসুস্থ হলে বাসায় থাকো, দেড় মিটার সোশ্যাল
ডিসটেন্স মেইনটেইন, নিয়ম করে হাইজিনিক থাকা কে আপাতত নর্ম হিসেবে দেয়া হয়েছে।“
সোশ্যাল ডিসটেন্সিং এর মিসইউজ করলে বা ইন্টিলিজেন্ট লকডাউনের মিসইউজ করলে প্রাপ্ত বয়স্কদের তিনশো নব্বই ইউরো জরিমানা করা হবে সাথে পাঁচ বছরের ক্রিমিন্যাল রেকর্ড মেইনটেইন করা হবে যা তার ক্যারিয়ারে প্রভাব ফেলতে পারে। অপ্রাপ্ত বয়স্কদের জরিমানা হবে পঁচানব্বই ইউরো আর ওদের কোন ক্রিমিন্যাল রেকর্ড থাকবে না।
সোশ্যাল ডিসটেন্সিং এর মিসইউজ করলে বা ইন্টিলিজেন্ট লকডাউনের মিসইউজ করলে প্রাপ্ত বয়স্কদের তিনশো নব্বই ইউরো জরিমানা করা হবে সাথে পাঁচ বছরের ক্রিমিন্যাল রেকর্ড মেইনটেইন করা হবে যা তার ক্যারিয়ারে প্রভাব ফেলতে পারে। অপ্রাপ্ত বয়স্কদের জরিমানা হবে পঁচানব্বই ইউরো আর ওদের কোন ক্রিমিন্যাল রেকর্ড থাকবে না।
ডাচ
সুপার মার্কেটে জিনিসের দাম স্টেবল আছে বা একই আছে কিন্তু চায়নীজ বা ইন্ডিয়ান গ্রোসারীতে
শাক সব্জির প্রায় ডাবল দাম তবুও পাওয়া যাচ্ছে এটাই সান্ত্বনা। প্লেন চলাচল বন্ধ হয়ত
জাহাজে আসছে, কেন এত দাম কে জানে। সাধারণতঃ ঝিংগা, বেগুন এগুলো পাঁচ ইউরো কিলো রাখে,
শিভামনি দশ ইউরো করে কিলো রাখলো। ওরিয়েন্টাল থেকে মাগুর, রূপচাঁদাও প্রায় ডাবল দামেই
আনলাম। চিংড়ি আর টার্কিশ শপে মাংসের দাম একই আছে।
আশাকরছি
দ্বিতীয় ধাপ সফল ভাবে শেষ করে আমরা তৃতীয় ধাপও শুরু করবো। কিন্তু মানুষের মনের এই যে
ভয়, এটি কতদিনে যাবে কে জানে। সব বন্ধ ছিলো সেটাই স্বাভাবিক লাগছিলো, এই যে সব খুলে
দেয়া হবে এটাই এখন অস্বাভাবিক আর খানিকটা ভীতিকর লাগছে।
তানবীরা
১০/০৫/২০২০
No comments:
Post a Comment