Thursday 17 December 2020

ইউরোপে কেন বাংলাদেশ অনুপস্থিত

https://www.prothomalo.com/business/world-business/%E0%A6%87%E0%A6%89%E0%A6%B0%E0%A7%8B%E0%A6%AA%E0%A7%87-%E0%A6%95%E0%A7%87%E0%A6%A8-%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%82%E0%A6%B2%E0%A6%BE%E0%A6%A6%E0%A7%87%E0%A6%B6-%E0%A6%85%E0%A6%A8%E0%A7%81%E0%A6%AA%E0%A6%B8%E0%A7%8D%E0%A6%A5%E0%A6%BF%E0%A6%A4 ভাষা, শিক্ষা, শিল্প, কৃষি, সংস্কৃতির এত প্রাচুর্য থাকা সত্বেও ইউরোপে কেন বাংলাদেশের চোখে পড়ার মত কোন অস্ত্বিত্ব নেই? কখনও কি এই দুই প্রান্তের চাহিদার সমন্বয় করার চিন্তা বা চেষ্টা হয়েছিলো? ইউরোপ বাংলাদেশে কি চাইতে পারে? কিংবা বাংলাদেশের কি চাহিদা থাকতে পারে তাদের কাছে? বানিজ্য? টাকা? ধরা যাক, তাই, কিন্তু সেটার প্রক্রিয়া কি ধরনের হওয়া উচিত? যেকোন ধরনের উন্নতির জন্যেই দরকার উন্নত কাঠামো আর সেজন্য চাই উন্নত প্রযুক্তি। প্রযুক্তির ওপর একবিংশ শতাব্দী দাঁড়িয়ে আছে, নিজেদের টিকে থাকার সার্থেই অত্যাধুনিক প্রযুক্তি আমদানী করা দরকার। নেদারল্যান্ডসের ব্যবসায়ীরা প্রায়ই অভিযোগ করে থাকেন, তারা তাদের জ্ঞান, চিন্তা, প্রযুক্তি নিয়ে বাংলাদেশে আসতে ইচ্ছুক ও প্রস্তূত কিন্তু তারা আস্থাভাজন অংশীদার খুঁজে পান না। তাদের এত আগ্রহের কারণ কি? না, বাংলাদেশে বিনিয়োগের জন্যে নেদারল্যান্ডসের কোন প্রেম ভালবাসা কাজ করছে না। ভৌগলিক দিক থেকে বিনিয়োগের জন্য এই মুহূর্তে বাংলাদেশ একটি সুবিধাজনক অবস্থানে আছে আর সেটাই তাদের লক্ষ্য। প্রতিটা দেশের বিনিয়োগ বিস্তৃত করার একটি লক্ষ্যমাত্রা থাকে, আপাতত সেই মাত্রার অভ্যন্তরে বাংলাদেশের অবস্থান। তারা লাভজনক বিনিয়োগে আগ্রহী। এতো গেলো নেদারল্যান্ডসের দিক। নেদারল্যান্ডস মানেই বুঝি আমরা পোল্ডার, ডাইক আর আলু। তাহলে বাংলাদেশ কেন নেদারল্যান্ডসের সাথে কাজ করতে আগ্রহী হবে? আমরা কি জানি আয়তনে বাংলাদশের প্রায় তিন ভাগের একভাগের সমান হলেও নেদারল্যান্ডস এই বিশ্বের ষোলতম অর্থনীতি। নেদারল্যান্ডসের মত একটি ছোট্ট দেশে পচাঁশি রকমের টমেট্যো উৎপন্ন হয়, পাঁচশো পঞ্চাশ রকমের উৎপন্ন হয় আলু। দু হাজারের ওপর ভিন্ন রকমের হিয়াসিন্ট ফুলের চাষ হয়। পেয়াজের জন্যে ক’দিন পর পর আমাদের ভারতের মুখাপেক্ষী হতে হয় কিন্তু নেদারল্যান্ডস পেয়াজ রপ্তানী করে। ক’দিন আগে বাংলাদেশও নেদারল্যান্ডস থেকে পেয়াজ আমদানি করেছে। পেয়াজ আমদানী না করে পেয়াজ ফলানোর প্রযুক্তি আর উন্নত প্রজাতির পেয়াজ বীজ আমদানী করলে কেমন হয়? আজকের যুগের চাহিদাতো টাকায় বা পন্যে আটকে থাকতে পারে না, সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন হলো প্রযুক্তির। ভৌগলিক দিক থেকে বাংলাদেশের সাথে নেদারল্যান্ডসের অসাধারণ সাদৃশ্য রয়েছে, বাংলাদেশের ডেল্টা প্রজেক্ট নেদারল্যান্ডস তদারকি করছে। গ্লোবাল ওয়ার্মিং এ বাংলাদেশ এবং নেদারল্যান্ডস প্রায় সম পরিমান ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। নেদারল্যান্ডসের প্রযুক্তির ক্ষেত্রে অন্যান্য জাতীয়তার সাথে কাজ করছেন বাংলাদেশ থেকে আসা প্রযুক্তিবিদরাও। নেদারল্যান্ডসের সাথে কাজ করার জন্যে এর চেয়ে বেশি কারণ কি বাংলাদেশের প্রয়োজন আছে? প্রযুক্তি আমদানী ও বিনিয়োগ সমন্বয়ের লক্ষ্যে নেদারল্যান্ডস ও বাংলাদেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রের দায়িত্বশীল ব্যবসায়ীদের নিয়ে, দি হেগে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসের উদ্যেগে প্রথমবারের মত ডিসেম্বরের আট আর নয় তারিখে ভার্চুয়ালি হয়ে গেলো, “বাংলাদেশ-নেদারল্যান্ডস ইনভেস্ট সাম্মিট টুয়েন্টি টুয়েন্টি।“ এতে অংশ নেয় ডাচ বিনিয়োগ সংস্থা আরভিও, আর বাংলাদেশের পক্ষ থেকে অংশগ্রহন করে বিজিএমইএ, ডিসিসিআই, এমসিসিআই, সিসিসিআই, স্কয়ার বাংলাদেশ, আকিজ গ্রুপ, প্রান আরএফএল গ্রুপ, জেমকন গ্রুপ, মেঘনা গ্রুপ, কাজী গ্রুপ, পিএইচপি, বিডা, বেজা, বেপজা সহ আরও অনেকে। বাংলাদেশের চাহিদা ছিলো কৃষি, হালকা প্রকৌশল আর সমুদ্র সম্পদের ব্যবহারে নেদারল্যান্ডসের সাহায্য। সে অনুযায়ী সম্মেলনটিকে তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়েছিলো, ভার্চুয়াল এই সম্মেলনের কৃষি পর্বে দুশো একত্রিশ জন উপস্থিত ছিলো, লাইটিং এ একশোজনের কিছু ওপরে আর পানি সম্পদে একশো ত্রিশজন। সম্মেলন চলাকালীন সময়ে মন্তব্য বিভাগ ছিলো বাংলাদেশীদের উচ্ছসিত মন্তব্যে ভরপুর, যা ডাচ ব্যবসায়ীদের উৎফুল্ল করেছে। বাংলাদেশের ইঞ্জিন চালিত নৌকা নিয়ে আলোচনা হয়েছে, কি করে এসব ডিজেল চালিত নৌকায় খরচ বেশি আর সাথে নদী ও পরিবেশ দূষন হচ্ছে তা নিয়ে বিশদ আলোচনা হলো। ডাচ বিশেষজ্ঞরা নৌকার আকৃতি ও ডিজাইনে পরিবর্তন আনা সহ ডিজেল থেকে এলপিজিতে রুপান্তরের পরামর্শ দিলেন। বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ নদী ব্যবস্থায় দ্রুততম বেগে চলা রেল আর রাস্তার সংযোজনের পরিকল্পনা ডাচ ব্যবসায়ীদের জন্যে দক্ষ ও আকর্ষণীয় প্রতিযোগিতামূলক ব্যবসার সুযোগ হতে পারে। DAMEN, IHC এর মতে, বাংলাদেশ সরকার এবং বেসরকারী পর্যায়ে যত ড্রেজার আছে এখন তার চেয়ে অনেক বেশি ড্রেজার বাংলাদেশের প্রয়োজন। শহর জুড়ে মানসম্পন্ন পরিশোধিত পানি সরবরাহ করার ব্যবস্থা, শিল্পাঞ্চলের বর্জ্য পানিকে পরিশোধিত করে পুনরায় ব্যবহার, একশোরও বেশি রকমের দেশীয় মাছের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্যে মাছের জিন অন্বেষণ এমনকি ওমেগা থ্রিতে ভরপুর ইলিশ কি স্যামনের জায়গা নিতে পারে ইত্যাদি আরো বহু সম্ভাবনার কথা। বাংলাদেশে নিযুক্ত ডাচ রাষ্ট্রদূত হ্যারি ফেরওয়াই এক ভিডিও বার্তায় এই উদ্যেগকে স্বাগত জানিয়ে বলেছেন, “ গত পঞ্চাশ বছর ধরে নেদারল্যান্ডস বাংলাদেশের পাশে আছে, বাংলাদেশ নেদারল্যান্ডসের সাথে যেমন বানিজ্যিক সম্পর্ক উন্নত করতে চায় ঠিক তেমনি নেদারল্যান্ডস ও বাংলাদেশের সাথে বানিজ্যিক সম্পর্কের উন্নতি চায়। ডেনহাগে অপেক্ষা করে আছে বাংলাদেশে দূতাবাস আর ঢাকায় অপেক্ষা করে আছি আমি, যেকোন প্রয়োজন, প্রশ্ন, তথ্যের জন্য সরাসরি আমাদেরকে যোগাযোগ করুন। ব্যবসার জন্যে বাংলাদেশ হলো পরবর্তী এশিয়ান বাঘ, বাংলা বাঘ। বাংলাদেশের এখন শুধু ভাল প্রচার দরকার। এই সম্মলেনের বেশীর ভাগ অংশগ্রহনকারী ডাচ, তাই যখন কোভিড উনিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রিত হয়ে আবার ভ্রমণের সুযোগ হবে তোমাদের সবাইকে দু হাজার একুশে আমি ঢাকায় আমন্ত্রণ জানাতে চাই।“ অনেকেই হয়ত বলতে পারেন এই সম্মেলন থেকে নগদ কি পাওয়া গেলো? না, নগদ নগদ কিছু পাওয়ার উদ্দেশ্যে এই সম্মেলনের আয়োজন করা হয়নি। দুই প্রান্তের সেতু বন্ধন করে দেয়া ছিলো সম্মেলনের প্রধান উদ্দেশ্যে। এখন থেকে প্রতি বছর এই সম্মেলন করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। আস্তে আস্তে এই পরিকল্পনা ওয়ান টু ওয়ান বিজনেস, বিজনেস টু বিজনেসে নিয়ে যাওয়াও পরিকল্পনার অংশ। বড় লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্যে অনেক বড় প্রস্তূতির দরকার হয়। এই সম্মেলন তার সূচনা করেছে। আশাকরা হচ্ছে, খুব শীঘ্রই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের সুযোগ ও সম্ভাবনা তৈরী হয়ে যাবে। তানবীরা তালুকদার ১৩/১২/২০২০

No comments:

Post a Comment