Wednesday 30 December 2020

সাতশো পয়তাল্লিশতম জন্মদিনে আমস্টারডাম

https://bangla.bdnews24.com/kidz/article1842666.bdnews?fbclid=IwAR34g75EqjGlHKeBl2HbwxSYwsyXdGaxMvWP_nDnbN7sjBHctlwO5_zZztY সাতশো পয়তাল্লিশতম জন্মদিনে আমর্স্টাডাম – ওলন্দাজ রাজধানীর গৌরবজ্জল ইতিহাস শত শত বছরের বিস্তৃত ইতিহাস সহ সংস্কৃতিতে পূর্ণ একটি ছোট শহরের নাম, আমস্টারডাম। আজও শহর ঘুরলে, প্রতিটি রাস্তার কোণে, প্রতিটি স্কোয়ারে আপনাকে অবাক করে দেয় এমন সমৃদ্ধ ইতিহাসের মুখোমুখি হওয়া আপনি এড়াতে পারবেন না। আমস্টারডামের অত্যন্ত মনকাড়া সাতশো পয়তাল্লিশতম জন্মদিনের সম্মানে, আসুন ইতিহাসের যে ঘটনাগুলি আজকের শহরটিকে তৈরি করেছে তা একবার দেখে নেওয়া যাক। আমস্টারডামের উৎস বারোশো পঁচাত্তর সালে যখন আমস্টেলের কাছাকাছি বসবাসকারী মানুষকে জল পথে অবাধে যাতায়াত করতে দেয়ার তথাকথিত টোল সুবিধা দেওয়া হয়েছিল সেই ইতিহাসে আমস্টারডাম শহরের নামটি প্রথম খুঁজে পাওয়া যায়। এর প্রায় ত্রিশ বছর পরে, তেরশো কিংবা তেরশো ছয় সালে - সঠিক তারিখ খুঁজে পাওয়া যায়নি - আমস্টারডামকে সরকারী শহরের মর্যাদা দেওয়া হয়েছিল। চৌদ্দ শতকের গোড়ার দিকে আমস্টারডামের দ্রুত বিকাশ ঘটে। প্রথম চার্চটি প্রায় তেরশো সালের কাছাকাছি সময়ে নির্মিত হয়েছিল, যা “আউডে কের্ক” নামে এখন কেন্দ্রীয় আমস্টারডামের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত, আমস্টেলোভার নদীতে একটি বাঁধ নির্মিত হয়েছিল, যেখানে ড্যাম স্কয়ারের জাতীয় স্মৃতিসৌধ এখন দাঁড়িয়ে আছে (তখন এটি প্লেটিস নামে পরিচিত ছিলো)। আমস্টারডামের বাণিজ্য ও অর্থনীতি পনেরশো তেতাল্লিশ সালে নেদারল্যান্ডসের একীকরণের পরে, আমস্টারডাম শহরটি বাণিজ্য কেন্দ্র হিসাবে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করেছিল, এটি এমন এক শহরে পরিণত হয়েছিল যেখানে উত্তর ও দক্ষিণ উভয় ইউরোপের পণ্য সংরক্ষণ করা, প্রক্রিয়াজাতকরণ এবং বিক্রি করা হতো। এই উন্নয়নশীল বানিজ্য সংস্থা মানচিত্রাঙ্কন, মুদ্রণ, ব্যাংকিং এবং বীমাসহ বিভিন্ন শিল্প গুনে সমৃদ্ধ ছিলো। এই বাণিজ্যের ফলে এই শহরটির প্রভূত অর্থনৈতিক অগ্রগতি হয়েছিল এবং ষোড়শ শতাব্দীতে আমস্টারডাম হল্যান্ড প্রদেশের বৃহত্তম শহর হয়ে উঠেছিল – পনেরশো আশি সালে এই শহরটির জনসংখ্যা ছিল প্রায় ত্রিশ হাজার। ডাচ স্বর্ণযুগ পঞ্চাশ শতাব্দীর শেষের দিকে, নেদারল্যান্ডস পন্য ও ক্রীতদাসের উপনিবেশিক ব্যবসায় জড়িত হয় এবং পনেরশো সালে দেশটি তাদের নিজস্ব বাহন ইন্ডিজে পাঠানো শুরু করে - এই প্রথম আমস্টারডাম থেকে ইন্ডিজে যাত্রা শুরু হয়। নেদারল্যান্ডসের পক্ষে ডাচ ইস্ট ইন্ডিজের যাত্রা আর্থিকভাবে প্রচুর সফল হয়েছিল এবং ষোলশ দুই সালে ডাচ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি (ভিওসি) প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। ভিওসি'র মূলধনের অর্ধেকেরও বেশি অংশ ছিলো আমস্টারডামের এবং এর ফলে কোম্পানির মধ্যে তারা উল্লেখযোগ্য শক্তি অর্জন করেছিল। ষোলশ একুশ সালে ডাচ ওয়েস্ট ইন্ডিয়া সংস্থা (ডব্লিউআইসি) প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, এবং ডাচ দাস ব্যবসায় একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল, সব মিলিয়ে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক শক্তি হিসাবে দেশের উন্নয়নে অবদান রেখেছিল। আমস্টারডাম এবং স্বর্ণযুগ এই উদীয়মান বাণিজ্য শিল্প এবং ক্রীতদাস ব্যবসায়ের মাধ্যমে অর্জিত অর্থ আমস্টারডামের জন্য প্রচুর লাভের সঞ্চার করেছিল, সপ্তদশ শতাব্দীর ইতিহাসে এটি ডাচ স্বর্ণযুগ নামে খ্যাত। ঐ সময়টাতে এই নগরীতে সম্পদ, শক্তি, সংস্কৃতি এবং সহনশীলতার স্রোত বয়ে যায়। আমস্টারডামে নর্ডকের্ক এবং ওয়েস্টকের্ক সহ বেশ কয়েকটি নতুন প্রোটেস্ট্যান্ট গীর্জা নির্মিত হয়েছিল এবং একটি নতুন সিটি হল তৈরি হয়েছিল। সপ্তদশ শতাব্দীতেও এই শহরটি উল্লেখযোগ্যভাবে প্রসারিত হয়েছিল এবং বর্তমানের কুখ্যাত খাল বেল্ট এবং জর্দান অঞ্চলটি নির্মিত হয়েছিল। সেই সময় থেকেই আমাদের আজকের পরিচিত আমস্টারডাম তার এই আদল নিতে শুরু করে। নেদারল্যান্ডসের বিদ্রোহ এবং গণতন্ত্র সপ্তদশ শতাব্দীর শেষের দিকে স্বর্ণযুগের অবসান হওয়ার পরে, দেশপ্রেমিক হিসাবে পরিচিত একটি গোষ্ঠী, শাসক বংশোদ্ভূতদের দুর্নীতির অবসানের দাবি করেছিল এবং সতেরশো পঁচানব্বই সালে ফ্রান্স থেকে নেদারল্যান্ডসে ফিরে এসে নেদারল্যান্ডসকে দখল করে তারপর আমস্টারডাম শহরের সরকারকে বদলে স্থানীয় প্রতিনিধি নিয়োগ করে এবং পুরো শহর এবং প্রজাতন্ত্রের কাছে গণতন্ত্রের ধারণা প্রবর্তন করে। তবে এটি দীর্ঘস্থায়ী হয়নি, আঠারশো পনের সালে, ডাচ যুবরাজ উইলাম রাজার মুকুট গ্রহণ করেছিলেন এবং আঠারশো আটচল্লিশ সালে সংসদীয় গণতন্ত্র হওয়ার আগে দেশটিতে সাংবিধানিক রাজতন্ত্র প্রবর্তিত হয়েছিল। আমস্টারডামের শিল্পায়ন আমস্টারডাম তখনও বিদ্রোহের কারণে দারিদ্র্য পর্যুদস্ত ছিল, কিন্তু শহরটি শিল্পায়নের দিকে চলে গেলো। এই সময়, আমস্টারডাম এবং ডেন হেল্ডারের মধ্যে নর্থ হল্যান্ডের খালটি নির্মিত হয়েছিল, শহরটির প্রধান বন্দরটিকে পলির হুমকির হাত থেকে বাঁচানোর জন্য। উনবিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে সুয়েজ খাল খোলা এবং জার্মানির একীকরণ সহ ঘটে যাওয়া উন্নয়নের ঘটনাগুলিতে ডাচদের রাজধানীতে আবার সমৃদ্ধি ফিরে আসে। আঠারশো ছিয়াত্তর সালে উত্তর সমুদ্র খাল খোলার ফলে আমস্টারডামকে সমুদ্রের সাথে সরাসরি সংযোগ দেওয়া হয়েছিল এবং আঠারশো উননব্বই সালে আমস্টারডাম তার সেন্ট্রাল প্রতিষ্ঠা করে একটি বিস্তৃত রেল যোগাযোগ স্থাপন করে। বিংশ শতাব্দীর শুরু পর্যন্ত এই শহরের উন্নয়ন ও প্রসার অব্যাহত ছিল, এবং উনিশো ষোল সালে স্কিপলে ছোট একটি বিমানবন্দর খুলে আমস্টারডাম আরও প্রসারিত হয়েছিল। শহরের দক্ষিণ-পশ্চিমে একটি নয়শ হেক্টরের বন তৈরি হয়েছিল, যা আমস্টারডাম বোস নামে পরিচিত, এবং তবে শেষ কিন্তু সর্বশেষে নয়, আমস্টারডাম শহর জুড়ে চৌদ্দটি ভেন্যুতে উনিশো আটাশ সালে গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকের আয়োজন করেছিল, যার বেশিরভাগ চিহ্ন পরে ধ্বংস করা হয়েছে। আমস্টারডাম এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ইহুদিদের উপর অত্যাচারের ফলে আমস্টারডাম এর দশ শতাংশ জনসংখ্যা হারায় যদিও এই শহরটি পুরো যুদ্ধ জুড়ে ব্যাপক পরিমাণে ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে যথেষ্ট ভাগ্যবান ছিল, তারপও এটি জার্মানদের দখলে চলে যাওয়ার পরে অত্যন্ত দুঃখজনকভাবে মিত্রবাহিনীর ভুল দিক নির্দেশনার বোমা হামলায় ক্ষত বিক্ষত হয়েছিলো। উনিশো চুয়াল্লিশ সালের সেপ্টেম্বরে আর্নহেমের যুদ্ধে পরাজয়ের পরে, উনিশো চুয়াল্লিশ থেকে উনিশো পয়তাল্লিশ সাল পর্যন্ত নেদারল্যান্ডস ক্ষুধার্ত শীত নামে পরিচিত ছিলো। ফলস্বরূপ আমস্টারডামে অগণিত মানুষ প্রাণ হারিয়েছিল। উনিশো পয়তাল্লিশ সালের পাঁচই মে, জার্মান সেনাবাহিনী আত্মসমর্পণ করে, এবং আমস্টারডাম সাতই মে তাদের মুক্তি উদযাপন করেছিল। যদিও উৎসব দীর্ঘস্থায়ী হয়নি, বেশ কয়েকটি জার্মান সৈন্য ড্যাম স্কয়ারে হামলা চালিয়ে গ্রোট ক্লাব (দি বায়েনক্রোফের) বিপরীত দিক থেকে গুলি চালিয়েছিল এবং কয়েক ডজন আমস্টারডামারকে হত্যা করেছিলো। যুদ্ধোত্তর: বিংশ শতাব্দীতে আমস্টারডাম যুদ্ধের অবসানের পরে, শহরটি পুনর্গঠনের কাজ শুরু করে, বন্দর এবং স্কিপল বিমানবন্দরের দিকে মনোনিবেশ করে এবং আধুনিক সময়ের ট্র্যাফিক এবং পরিবহন ব্যবস্থার সাথে নিজেকে খাপ খাইয়ে নেয়। ফলস্বরূপ, আইজে টানেলটি নির্মিত হয়েছিল এবং একটি মেট্রো নেটওয়ার্ক এবং আমস্টারডাম রিং তৈরি করা হয়েছিল। শহরের দক্ষিণ-পূর্বে বেলমেমার সহ নতুন আবাসিক পাড়াগুলিও নির্মিত হয়েছিল। আমস্টারডাম শহর তার পরিচয় নিয়ে লড়াই করছিল, মূলত আবাসিক রাজধানী বা অর্থনৈতিক ও আর্থিক কেন্দ্র কি হবে এটির পরিচয়, তা নির্ধারণ করতে অক্ষম ছিল। যাহোক, উনিশো ষাটের দশকে, এটি একটি উন্নত আবাসিক জায়গা হিসাবে খ্যাতি অর্জন করেছিল এবং বাইরে থেকে এই শহরে আসা যুবসংস্কৃতির বিস্ফোরণ আমস্টারডামকে আন্তর্জাতিকভাবে খ্যাতিসম্পন্ন করেছিল। উনিশো আটাত্তর সালে পৌরসভা দৃঢ় সিদ্ধান্ত নিয়ে আমস্টারডামকে আবাসিক শহর হিসাবে স্বীকৃতি দিয়েছিলো। উনিশো আশি থেকে উনিশো নব্বইয়ের দশকে, স্থানীয় অর্থনীতি পুনরুদ্ধার শুরু হয়। যদিও শহরের প্রাণকেন্দ্রে ঐতিহাসিকভাবে আবাসিক কার্যক্রম ছিলো কিন্তু শহরের উপকণ্ঠে ক্রমবর্ধমান সংখ্যক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং অফিসকে স্বাগত জানানো হয়েছে। শহরের দক্ষিন প্রান্ত ব্যাপকভাবে বিকশিত হয়েছিল এবং আমস্টারডাম ব্যবসা ও অর্থনৈতিক কেন্দ্র হিসাবে খ্যাতি অর্জন করেছিল, উনিশো তিরানব্বই সালের মধ্যে স্কিপল ইউরোপের পঞ্চম বৃহত্তম বিমানবন্দরে পরিণত হয়। উনিশো চুরাশি সাল থেকে, পড়াশোনা করতে বা কাজের সন্ধান করতে শহরে আসা তরুণদের হিসাবে আবারও বাসিন্দাদের সংখ্যা বাড়তে শুরু করে। এই জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে আবাসন সঙ্কটের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের প্রয়াসে শহরটির আরও বিস্তৃতি ঘটে। নব্বইয়ের দশকে, আমস্টারডাম ইস্টের বন্দরটি একটি আবাসিক এলাকায় রূপান্তরিত হয়েছিল, যা বর্তমানে জেইবার্গ নামে পরিচিত, এবং অন্যান্য আবাসিক অঞ্চলগুলি (অথ্যার্ৎ বেলমেমেয়ার এবং জেইডাইক) বসবাসের জন্য আরও আকর্ষণীয় ভাবে সংস্কার করা হয়েছিল। আধুনিক আমস্টারডাম এবং ডাচ রাজধানীর ভবিষ্যত গত পঁচিশ বছর ধরে আমস্টারডাম অর্থনীতির বিকাশ অব্যাহত রেখেছে এবং জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েই চলেছে। শহরটি নেদারল্যান্ডসের সাংস্কৃতিক রাজধানী হিসাবে রয়ে গেছে এবং প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ পর্যটককে স্বাগত জানিয়ে এটি একটি মূল পর্যটন কেন্দ্র হিসাবেও পরিণত হয়েছে। আবাসন ঘাটতি এবং বাড়ির দাম বাড়ার বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাওয়া, এবং শহর ও এর বাসিন্দাদের উপচে পড়া পর্যটকদের সংখ্যা নিয়ে উদ্বেগের কারণে এখন শহরটি ভবিষ্যতে কী হবে তা নিয়ে সকলে উদ্বিগ্ন। আমস্টারডামের মেয়র, ফেমেক হালসেমা এবং পৌরসভা, শহরের কেন্দ্রস্থলের বাসিন্দা এবং স্থানীয়দের সাথে নিয়ে আমস্টারডামকে আবারও একটি "সত্যিকারের শহর কেন্দ্র" হিসাবে গড়ে তোমার বিকল্পগুলি অনুসন্ধান করছে। মূলঃ ভিক্টোরিয়া সিভানো ভাষান্তরঃ তানবীরা তালুকদার ২৪/১২/২০২০ https://www.iamexpat.nl/expat-info/dutch-expat-news/amsterdams-745th-birthday-brief-history-dutch-capital?fbclid=IwAR2cfNNwGay-mTKZw0Eb3LyC18ywzbnl7wgapFxykxoJ_-m5UWSoM_78jkg

No comments:

Post a Comment